• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বরাদ্দ অপ্রতুল

  কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

২৫ জুলাই ২০২০, ১৬:৪৪
বন্যা
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বরাদ্দ অপ্রতুল (ছবি : দৈনিক অধিকার)

কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। অপ্রতুল ত্রাণের কারণে জনপ্রতিনিধিরাও হাত গুটিয়ে বসে আছেন। ফলে পানিবন্দি পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো বসবাস করছেন। তাদের অপেক্ষা কখন মানুষ এসে সহযোগিতার হাত বাড়াবে। কিন্তু দীর্ঘ ২৫ থেকে ২৬ দিনব্যাপী টানা বন্যায় দেখা মেলেনি কারও। এতে মানবেতর দিন কাটছে তাদের।

এ দিকে, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণের কথা বলা হলেও বরাদ্দ অপ্রতুল। জেলা প্রশাসন এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৫২০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ জন্য শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার প্যাকেট। সেই হিসেবে ৪০ হাজারের মতো মানুষ এই ত্রাণ পেয়ে থাকলেও এখনও ২ লাখ ১০ হাজার মানুষের হাতে পৌঁছায়নি শুকনো খাবার।

শনিবার (২৫ জুলাই) সকালে সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের কদমতলা, নওয়াবশ, ছড়ারপাড় এলাকা ঘুরে দেখা যায় বানভাসি মানুষেরা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। এই ইউনিয়নে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ এখনও সরকারি ত্রাণ পায়নি। এছাড়া দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের সংকট। নারীরা পানিতে ভিজে দূর-দূরান্ত থেকে নলকূপের পানি সংগ্রহ করছে।

কথা হলো কদমতলা গ্রামের রহিমা বেগমের সাথে। তিনি পানিতে ভিজে অনেক দূর থেকে পাতিলে করে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। ছোট্ট একটি উঁচু ঢিবিতে ছাপরা করে স্বামী-সন্তান, মেয়েসহ ৭ জন বসবাস করছেন। ওই ছাপরায় রাখা হয়েছে একটি গরুও। এই পরিবারটি চরম দুর্দশার মধ্যে অবস্থান করলেও এখনো তাদের কাছে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি।

রহিমার ভাষায়, ‘বাহে অনেক কষ্ট করি পানি আনা নাগে। থাকার জাগা নাই। খুব কষ্ট করি আছি। কাঁইয়ো খোঁজ খবর নেয় না।’ এরপর এক বুক পানি ভেঙে ছোট্ট ছাপরাটির দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি।

রহিমার স্বামী খোরশেদ দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘বাপুরে রোদ আর ঝড়িত অনেক কষ্ট করি আছি। করোনা আর পানি থাকায় জামাই আর আমি কাম-কাজ না পায়া ঘরত বসি আছি। খাবার নাই। প্রায় না খায়া আছি।’ নদীর মাছ ধরে কোনোমতে জীবনযাপন করার চেষ্টা করছেন তারা।

এ ব্যাপারে পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মাস্টার দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। ত্রাণ পাইছি মাত্র সাড়ে ৩শ’। শুকনো খাবার পাই না। ভিজিএফ পাইছি ৭ হাজার মানুষের। বানভাসিদের জন্য যে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা অপ্রতুল।’

তিনি জানান, বন্যার সময় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না। কষ্ট করে হলেও তারা বাড়িতে থাকার চেষ্টা করে। কেউ কেউ বাড়ির আশে পাশে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

এ দিকে রহিমা বেগমের দুর্ভোগের কথা শুনে বিকালেই কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম।

আরও পড়ুন : শেরপুরে বন্যায় পৃথক ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু

ত্রাণ সংকটের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দৈনিক অধিকারকে জানান, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৪শ’ মেট্রিক টন জিআর চাল ছাড়াও ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। যেখান থেকে ৪ লাখ টাকার গো-খাদ্য ও ২ লাখ টাকার শিশু খাদ্যসহ ১৩ লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। এছাড়া ৮ হাজার শুকনো খাবার বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৩ লাখ টাকার ত্রাণ চাওয়া হয়েছে। খবর পেলেই আমরা বন্যার্তদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি।’

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড