• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুন্সিগঞ্জে বন্যায় কোরবানির পশু জবাইয়ের স্থান সংকট

  রিয়াদ হোসাইন, মুন্সিগঞ্জ

২৫ জুলাই ২০২০, ১০:১৬
মুন্সিগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত

১০ জিলহজ আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় পশু কোরবানি করেন মুসলমানরা। ইদুল আযহা মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশে কোরবানির ইদ হিসেবে পরিচিত এই উৎসবের মূল আহ্বান ত্যাগের। তবে গত কয়েক বছরের কোরবানি ঈদের থেকে এ ইদ ব্যতিক্রম । এ বছর মুন্সিগঞ্জে জেলায় একদিকে করোনা মহামারি অন্যদিকে বন্যা কবলিত অঞ্চল। এ বছর বন্যায় ক্রমাগত ক্ষত-বিধ্বস্ত মুন্সিগঞ্জ জেলা। গ্রামের পর গ্রাম বন্যার পানি প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় এ পর্যন্ত জেলার ৪ উপজেলার ২০ ইউনিয়নের দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৪৩ হাজার পরিবার।

এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ১ আগস্ট মুসলমানদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ইদুল আযহা পালন করা হবে। করোনার কারণে অর্থ সংকটে জেলার প্রায় ৩৫ ভাগ মানুষ কোরবানি দিতে পারবে না। অন্যদিকে জেলায় বন্যা আঘাত এনেছে। অর্থ সংকট ও জবাইয়ের স্থান সংকটের কারণে কোরবানি অনিশ্চিতায় রয়েছে অনেক পরিবার।

শুক্রবার পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও মাওয়া পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে জেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মা সংলগ্ন জেলার চারটি উপজেলা সদর, টঙ্গিবাড়ী, লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। পানিবন্দি রয়েছে সাড়ে ৪৩ হাজারের অধিক পরিবার। বেশ কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে পানিবন্দি মানুষরা।

মুন্সিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়, উজান থেকে নেমে আসা স্রোতে পদ্মায় আগামী কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এদিকে বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়া পদ্মার চরের গ্রামগুলোর বসতবাড়িতে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও বুক সমান পানি। এসব বসতবাড়িতে থাকা মানুষজনের সঙ্গে বিপদে পড়েছে তাদের গবাধি পশু ও হাঁস-মুরগিও। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘরের মাচা উঁচু করলেও পানিবন্দি হয়ে চরম বিপাকে দিন কাটাতে হচ্ছে বানভাসি পরিবারগুলোকে। তারমধ্যে আসন্ন কোরবানি ঈদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পাড় করছেন বন্যাকবলিতরা।

রুহিতপুর এলাকার আল-আমিন আলমগীর বলেন, মাদববাড়ী ভিটায় প্রতি বছর কোরবানির পশু জবাই করা হতো । এ বছর ভিটায় পানি উঠায় কোরবানি পশু কোথায় জবাই করা হবে সে বিষয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

পূর্বরাখি এলাকার চুন্নু বেপারি বলেন, বন্যার কারণে এ বছর কোরবানি দেওয়া প্রায় মুশকিল । কোথায় কোরবানি পশু জবাই দিবো তা ভেবে পাচ্ছিনা । এ বছর স্থান সংকটের কারণে অনেকেই কোরবানি দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

হাসাইল এলাকার আপন সরদার বলেন, কোরবানি বর্জ্য সরানো নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে এবছর। কেউ যদি পানিতে কোরবানির বর্জ্য ফেলেন, তাহলে সে বর্জ্য অন্যের বসতঘরে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

লৌহজং উপজেলার কামাল উদ্দিন বলেন, বন্যার কারণে আমাদের উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি বছর কোরবানি ঈদ হলে যে জমজমাট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এ বছর সেই জমজমাট দৃশ্য দেখা যাবে না। দেখা যাবে না আগের মতো গরুর হাট। শুধু কোরবানি পশু জবাই করার স্থান সংকট নয় সেইসাথে হাটেরও সংকট দেখা দিয়েছে।

কামারখাড়া এলাকা আব্দুর কাদির হাওলাদার বলেন, প্রতি বছর কোরবানি ঈদ আসলে গরু নিয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষের যাতায়াত দেখা যায়। এ বছর বন্যা , ভাঙন ও করোনার কারণে পুরানো সে দৃশ্য নেই। নেই গরু নিয়ে মানুষের যাতায়াতের দৃশ্য।

দিঘীরপাড় এলাকার দিলা বেপারি বলেন, ভাঙনের কারণে আমাদের এলাকার অনেক মানুষ অন্য জায়গায় চলে গেছে। এছাড়া বন্যায় পানিবন্দি রয়েছে অনেক পরিবার । এমন সময় কোরবানির পশু কিনবো কিন্তু কোথায় জবাই করবো তা নিয়ে পারিবারিকভাবে আলোচনা চলছে। স্থান নির্ধারণ করতে পারলে আল্লাহ চাইলে প্রতিবছরের মতো এ বছরও কোরবানি দিবো।

আরও পড়ুন : ক্রমাগত অবনতির দিকে মুন্সিগঞ্জের বন্য পরিস্থিতি

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী টিএম রাশেদুল হাসান বলেন, চলতি মাসে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে জেলার নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়তে পারে। তবে পানি বাড়লেও আগস্ট মাসে গিয়ে পদ্মার পানি কমতে পারে। তাই ধারনা করা যাচ্ছে ঈদের আগে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড