হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দী মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। তিন বেলার জায়গায় অনেকে দু বেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ত্রাণ সংকটে বানভাসিরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শুকনো খাবার, সুপেয় পানি ও জরুরি চিকিৎসা এবং স্যানিটেশন সংকটে বিপন্ন পানিবন্দী মানুষের জীবন।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীসহ অন্যান্য নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টানা ২৫দিন ধরে দুর্ভোগে রয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। অপরদিকে তিস্তা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড ভাঙন। একদিকে ভাঙন আর অন্যদিকে পানিবন্দী অবস্থায় চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। বানের পানিতে ডুবে মারা গেছেন ২০জন। এরমধ্যে ১৫জনই শিশু। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান।
মাঝে ২ থেকে ৩ দিন পানি কমে গেলেও গত এক সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি আবারও হু হু করে বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ধরলা নদীর পানি ৯২ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারীতে ৬৯ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার পাঁচ ভাগের তিনভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬০ ইউনিয়নের প্রায় ৫শতাধিক গ্রামের সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। এতে ৫০ হাজার বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার হেক্টর ফসলী জমির ক্ষেত। বন্যায় ৫টি স্কুল ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ১৩৯টি। এছাড়াও ৩৭ কিলোমিটার সড়কপথ ও ৩১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার।
জেলার চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফা জানান, আমরা ত্রাণ সঠিকভাবে পাচ্ছি না, যেভাবে পাওয়া উচিৎ জনগণ সেভাবে পাচ্ছে না। এই মূহুর্তে শুকনো খাবার, স্যানিটেশন, পানি ও ঔষধের ভীষণ প্রয়োজন।
বন্যার মধ্যেই তিস্তা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নের কাসিমবাজারে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়ির হাট এলাকায় ক্রস বারের মাটির ৫০ মিটার পানিতে ভেসে গেছে। ভাঙন দেখা দিয়ে রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিরাম এলাকার ক্রস বারেও। এতে করে ওই দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। গত ৫ দিন ধরে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ভাঙন কবলিত এলাকার আব্দুল আজিজ (৬২) জানান, তিস্তার ভাঙনে ৬ বার বাড়ি ভেঙেছি। এবার আর জায়গা না থাকায় চর বিদ্যানন্দ থেকে পার্শ্ববর্তী গাবুর হেলানে জামাই নুর মোহাম্মদের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছি।
এই এলাকার হক্কানী মিয়া জানান, এখানে গত ৮দিন ধরে ভাঙন চলছে। আজও ৫টি বাড়ি সরিয়েছে। এরা হলো আব্দুল আজিজ, কাজী, রহমান, হবি ও নজরুল। যেভাবে ভাঙছে তাতে হুমকির মুখে রয়েছে গাবুর হেলান মসজিদ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাজাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়, সোলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৈয়ব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহাসানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাঘব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থান। যা বিলীনের পথে রয়েছে।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের এক তথ্যে জানা যায়, গত ২০জুন থেকে ২২জুলাই পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ২০জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৫জন শিশু। যার মধ্যে ৬ জন কন্যা শিশু ও ৮ জন ছেলে শিশু। শিশুরা হলেন-আরাফাত আলী (৭), শান্ত মিয়া (১০), বেলাল হোসেন (৫), মুক্তাসিন (১৪ মাস), কথা রায় (২), জাহিদ (১২),সুচরিতা (২), মাহিন (১৭মাস), লামিয়া খাতুন (২), কেয়া আক্তার মীম (১০), রাকু (১৫), মুন্নি (১৮মাস), লাদেন (৭), বায়েজিদ (৮) ও ইয়াছিন আলী (৮)। মৃত অন্যরা হলেন-জামাল ব্যাপারী (৫৫), সৈয়দ আলী (৭০), আব্দুল আবুয়াল (৪০), নুরুল আমিন (৭০) ও সুরুজ্জামান (৪৩)।
সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান শুধু পানিতে ডুবে ১৫ জন শিশুর মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন শুধুমাত্র জনসচেতনতার মাধ্যমে এ মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব। এ জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : ছাত্রীকে কোচিংয়ে ধর্ষণের পর ফের ধর্ষণ চেষ্টাকালে শিক্ষক ধরা
এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৪৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করেছি। ২ লক্ষ টাকার শিশু খাদ্য ও ২ লক্ষ টাকার গো-খাদ্য। এছাড়াও ৫ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড