• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুন্সিগঞ্জে করোনা ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে না বানভাসিরা

  রিয়াদ হোসাইন, মুন্সিগঞ্জ

২৩ জুলাই ২০২০, ১১:০৫
মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি

মুন্সিগঞ্জ জেলা করোনার পাশাপাশি এখন বন্যার আঘাতে ক্ষত-বিধ্বস্ত । এদিকে জেলায় নীরবে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে চলছে অন্যদিকে বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে করোনাভাইরাস ক্ষতিকর মাত্রায় ছড়ানোর ঝুঁকি আছে কি না তা নিয়ে মত ভিন্নতা আছে। কিন্তু সুরক্ষা বর্জ্য থেকে বেশি মাত্রায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেও এই ভাইরাস কিছু ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা সম্ভব হবে না বলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি। পাশাপাশি বন্যা ও ভাঙন কবলিতদের মাঝে গাদাগাদি করে ত্রাণ বিতরণ করা, তাতেও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আরেক বিপদ হলো বর্ষাজনিত সাধারণ জ্বর সর্দি কাশি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা থেকে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে করোনা আক্রান্তদের আরো বেশি দুর্বল করে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে, মুন্সিগঞ্জ জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬১০ জনের । এরমধ্যে মৃত রয়েছেন ৫৯ জন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে বন্যার আবির্ভাব ঘটেছে। বর্তমানে জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে লৌহজং উপজেলার ৯টি, সদর উপজেলায় ২টি, টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় ৪টি ও শ্রীনগর উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই চার উপজেলার প্রায় ২৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। এরমধ্যে মাত্র ১১০টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। বাকিরা নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন উঁচু জায়গা বা প্লাবিত বসতভিটাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকার বানভাসি করিম হালদার বলেন, শেষে রক্ষা পর্যন্ত নিজ বসতভিটায় থাকতে চাই। এভাবে দেশের পরিস্থিতি ভালো না। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হতে চাই না। যেভাবে আছি ভালো আছি আমরা।

শ্রীনগর উপজেলার কামারখাঁও গ্রামের এক বন্যা কবলিত নারী লৎফা বেগম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনেকেই বলেছে। কিন্তু ছোট ছোট পোলাপান নিয়ে যেতে ভয় করে। বন্যার পানিতে কষ্ট হলেও বাঁচতে পারবো কিন্তু করোনা হলে বাঁচার সম্ভাবনা নাই।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবিরুল ইসলাম খান বলেন, অনেকেই করোনা সংক্রমণের ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না। আমরা সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা জন্য। এপর্যন্ত ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০৭টি পরিবার আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহিমা আক্তার বলেন, এখন পর্যন্ত ১০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তার মধ্যে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে তিনটি পরিবার আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। বাকি বসবাড়ি রেখে আসতে চান না।

মুন্সিগঞ্জ সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্ষার পানির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারলেও বন্যা কবলিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ ওই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা খুব কঠিন ব্যাপার। এ ছাড়া এলাকায় এলাকায় ত্রাণ বিতরণেও ঝুঁকি থাকে। এসব ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় স্বাস্থ্য টিমগুলোকে সতর্ক থাকা জরুরি। পাশাপাশি যাদের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা দেবে তাদের যেন দ্রুত করোনা পরীক্ষা করেন । একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রতি বছরই বর্ষার সময় দেশে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এবারও হয়তো তাই থাকবে। এবার যেহেতু করোনা সংক্রমণ রয়েছে এবং এর উপসর্গের সঙ্গে যেহেতু মিলে যায় তাই শহরে বা গ্রামে যেখানেই হোক কারো মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করা জরুরি। কারণ, রোগ নিশ্চিত না হলে চিকিৎসাও শুরু করা যাবে না।

আরও পড়ুন : মুক্তাগাছায় একদিনে স্কুলছাত্রীসহ ৩ জনের লাশ উদ্ধার

মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপক কুমার রায় (সার্বিক) জানান, আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে একটি পরিবারের জন্য একটি কক্ষ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া তারা যেনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করেন সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এছাড়া পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে ও চিকিৎসা প্রদানের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড