শরীয়তপুর প্রতিনিধি
বন্যায় নদ-নদীর পানি বেড়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা সহ নড়িয়া ও জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে ওই এলাকার ১৫০ হেক্টর কৃষিজমি, ৫০০ মিটার পাকা সড়ক ও ১০টি বসতবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৩০টি পরিবার সহ রাস্তাঘাট ও ফসলী জমি। শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন আরো ৩ দিন নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও দুই উপজেলায় অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
সদর উপজেলার ডোমসার ২ হাজার পরিবার পানি বন্দি। শৌলপাড়া সারেংগা গ্রামের প্রায় ২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা সহ ৩০টি পরিবার ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তুলাসার ইউনিয়ন সহ চিতলিয়া ইউনিয়ন ৫/৭ টি পাকা রাস্তা ও ৩০টি পরিবার পানিবন্দি আছে। সদর উপজেলার এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
১৯ জুলাই রবিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নড়িয়া প্রশাসন এলাকায় ডগ্রিবাজারে ঢাকা- মাওয়া সড়কে কিছু জায়গায় পানি উঠেছে। সেই সাথে পুরোরাস্তায় পানি ছুঁইছুঁই করছে। এলাকাবাসী জানান, এরকম পানি বাড়তে আজ- কালের ভেতর পানিতে রাস্তাটি তলিয়ে যাবে।
নড়িয়া-জাজিরা আঞ্চলিক সড়কের পাঁচুখারকান্দি থেকে ইশ্বরকাঠি, পোরাগাছা এলাকার রাস্তা সহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
ঈশ্বরকাঠি এলাকায় পানি উঠে ঢাকার ও জাজিরা সঙ্গে নড়িয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ইশ্বরকাঠি গ্রামের সেফালি বেগম বলেন, নিজেদের সমস্যা, গরু বাছুর নিয়ে রান্না বাড়া করে খাইতে সমস্যা, ঘরে পানি ঢুকছে। সাপকোপের ভায়টয় করে। ভোট দেয়ার পরে জনপ্রতিনিধিরা কোন খোঁজ-খবর নেয় না। কত মানুষ পানিতে ভাসতাছে কেউ তো আইয়া দ্যাহে না।
এলাকার মানুষের অভিযোগ এনজিও-র কিস্তি নিয়ে। তারা প্রতিবেদককে বলেন, স্যার আমাদের কাছ থেকে এনজিও-র কিস্তি নিতে না, কইরেন।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব দৈনিক অধিকারকে বলেন, নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের অধিকাংশ স্থানই পানিতে তলিয়ে গেছে। এটা নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। আর যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারের সময় পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০-১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর পয়েন্টে রবিবার রাতে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৭/১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উঠা নামা করছে। নদীতে পানির মোট উচ্চতা ছিল ৪৫৭ সেন্টিমিটার। আগামী তিন দিন নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাবে।
মোক্তারেরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌকিদার জানান, গত ১০ জুলাই শনিবার বিকাল থেকে নড়িয়া-জাজিরা আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ৩০০ মিটার ঈশ্বরকাঠি এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ঢাকার ও জাজিরার সঙ্গে নড়িয়ার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নড়িয়ার গাগড়ি জোড়া, পৌর এলাকার ঢালিপাড়া, কলুকাঠি, জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর সারেংকান্দি, পাচুখার কান্দি, কাজিয়ারচর, পালেরচর, বড়কান্দি, পূর্বনাওডোবা, জাজিরা ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে।
এলাকার লোকজন জানান, বন্যা কবলিত জাজিরা ইউনিয়নের পাতালিয়া কান্দি, দুব্বাডাঙ্গা, ভানু মুন্সি কান্দি, হাওলাদার কান্দি, লখাই কাজি কান্দি, জব্বার আলী আকন কান্দি, জব্বার মোল্যা কান্দি ও গফুর মোল্যা কান্দি এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব দেখা গেছে। হাস মুরগি, পশু, নিয়ে বিপাকে পড়েছে এলাকার মানুষ। ওইসব এলাকায় পাট, রোপা আমন, বোনা আমন, শাক সবজি ও আখ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বহু জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয়নাল মাদবর বলেন,বন্যার পানিতে পাইনপাড়া গ্রামের ৬টি গরু মারা গেছে। আমার দুই শতাধিক হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। এ গ্রামের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। আমাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। গবাদিপশুর খাদ্য সহ বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
জাজিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে জাজিরার সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে কষ্টে আছে মানুষ। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে শুরু করেছি।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তি রুপা রায় দৈনিক অধিকারকে বলেন,বন্যার পানিতে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর, মোক্তারচর ও পৌর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।
নড়িয়া পৌরসভার ২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্তত ৯০টি পরিবারের বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মানুষের দুর্ভোগ এড়াতে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। দুই উপজেলা নড়িয়া ও জাজিরার অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যা কবলিতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা আছে। এখনও কোনো লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আসেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করা শুরু হয়েছে। তালিকা করা হলে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড