• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফরিদপুরের চাঁদপুর ইউনিয়ন যেন মাদকের স্বর্গরাজ্য

  ফরিদপুর প্রতিনিধি

১৩ জুলাই ২০২০, ১৭:১২
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরের সদর উপজেলায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। আর জেলাটির চাঁদপুর ইউনিয়ন যেন মাদকের স্বর্গ রাজ্য! হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদক। বর্তমানে মাদকাসক্ত ও মাদক বিক্রেতা মানুষের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদের মধ্যে বেশি ইয়াবা ট্যাবলেটে আসক্ত, পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমার ও ভারত থেকেই বন্যার ঢলের মতো আসছে ইয়াবা। ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশের ন্যায় ফরিদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নেও।

এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মরণনেশা ইয়াবা পৌঁছায়নি। এর ছোঁবলে যুব সমাজ ও সৃজনশীল তরুণ প্রজন্মেও একটা অংশ হারিয়ে যাচ্ছে কালো জগতে।

পরিবারকে ফেলছে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায়। আসক্ত তরুণরা ধর্ষণসহ নানা নৃশংস অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। সচেতন নাগরিকের মন্তব্য ইয়াবা ট্যাবলেট না পেয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ায়। এছাড়া গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ মাদকের আসক্তের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

সূত্র জানায়, চাঁদপুর তিনটি উপজেলার সীমান্ত হওয়ার কারণে সহজেই ঢুকে পড়ছে মদ, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক। চাঁদপুর থেকে এসব মাদক শহর ও গ্রাম এলাকায় বিক্রি এবং সেবন করছে একটি সিন্ডিকেট।

আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝে মধ্যে মাদকদ্রব্যসহ ব্যবসায়ী আটক হলেও থামছেই না মাদকের চোরাচালান। নিয়মিত চাঁদা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, রাতের আধাঁরে আনা হয় মাদকের বড় বড় চালান। এসব বড় ধরনের চালান কখনো আইনশৃংখলা বাহিনী আটক করতে না পারলেও মাঝে মধ্যে ছোট ছোট চালান আটক করে থাকে।

এক সময় শুধু ফেনসিডিল, হেরোইন ও গাঁজার রাজত্ব ছিল এখানে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন ইয়াবার রাজত্ব শুরু হয়েছে সম্প্রতি।

আর এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অজানা কারণে মূল হোতাদের আটক করতে পারছে না পুলিশ। ইয়াবার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের বড় ধরনের কোনো ভূমিকা নেই।

নিয়মিত বখরা নেয়ায় পুলিশ তেমন ধরনের মাদকের চালান আটক করছে না বলেও অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। স্থানীয়রা জানান, এখনও মাদকের মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে না এই প্রশ্ন সচেতন মহলের।

এই বিষয়ে স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সামসুর নাহার মহীদ বলেন, আমরা বার বার অভিযোগ দেওয়ার পরেও প্রশাসন তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং প্রশাসনের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক আমাদের চেয়েও ভাল।

৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আজাদ মেম্বার বলেন, বার বার অভিযোগ দেওয়ার পরেও ওসি সাহেব কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আই জাকির হোসেন উল্টো এলাকার ত্রাস ও বারোটা মামলার আসামির বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করেন। নিয়মিত খাওয়া দাওয়ার পরে টিফিন ক্যারিয়ার ভরে খাবারও নিয়ে যান।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এই বিষয়ে এসপি স্যারের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরে ওসি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আই কেউযই আমাদের ফোনই ধরছে না।

চাঁদপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক লিটন বলেন, আমাদের ইউনিয়ন মাদকের আগ্রাসনে মারাত্বকভাবে আক্রান্ত। পুলিশ দুই/তিনমাস পর পর একটা করে অভিযান চালায়। যাদের ধরে তারা আবার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যায়। তখন তারা আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ওই এলাকাটি বর্ডার এলাকা হওয়ায় ওখানে মাদকের প্রকোপ একটু বেশি। তবে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি। মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবক এবং মাদক ব্যবসায়ে সহায়তাকারীদের যেখানেই পাওয়া যাবে তাদের কোন ছাড় নেই।

প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমরা তদন্ত করব যদি কেউ জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পুলিশকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ তথ্য না দিলে তো পুলিশের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া কষ্টকর। তবে প্রশাসনকে কেউ অসহযোগিতা করলে তিনি সরাসরি আমাকে জানানোর অনুরোধ করছি।

তবে এ ব্যাপারে সদর থানার অফিসার ইনচার্জের সঙ্গে (ওসি) যোগাযোগ করতে তাকে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড