• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫০ সে.মি. উপরে

  সারাদেশ ডেস্ক

১৩ জুলাই ২০২০, ১০:১৯
তিস্তা ব্যারেজ (ছবি : সংগৃহীত)

উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তার বাম তীরে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

রোববার (১২ জুলাই) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

রাত ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি শুক্রবার দুপুর থেকে টানা বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় উজানের সামান্য ঢলেই তিস্তার দুই তীর প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে কয়েক হাজার পরিবার। শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে উজানে ভারতের পাহাড়ি ঢলের মাত্রা বেড়ে যায়। তা অব্যাহত থেকে রোববার রাত ৯টায় আরো বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাই ব্যারেজ রক্ষার্থে ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়ে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করতে তিস্তা পাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অধিবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং শুরু করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এ দিকে রাতে পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় জেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে ফ্লাড বাইপাসের ভাটিতে থাকা মানুষজনকে অন্যত্র সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটলেও কেউ কেউ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ সতর্কতাকে অবজ্ঞা করে ঘরেই মাচাং বানিয়ে থাকছে।

বিগত বছরে রেড অ্যালার্টের সময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ফ্লাড বাইপাসের ভাটিতে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। তবে এ বছর জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

টানা ৩ দিনের বন্যায় তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা ঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ দিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। চৌকি/খাটের উপর মাচাং বানিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে পানিবন্দী পরিবারগুলো। কেউ কেউ ঘর বাড়ি ছেড়ে উচু বাঁধ বা পাশ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। নিদারুণ বিপাকে পড়েছে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা। গবাদি পশুপাখি নিয়েও চরম বিপাকে পানিবন্দী পরিবারগুলো। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়।

তিস্তার বামতীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো দীর্ঘ দিন সংস্কার না করায় সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব বাঁধ ভেঙে গেলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলেও শ্বঙ্কিত তিস্তাপাড়ের মানুষ। রোববার রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী হাসপাতাল সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে হাতীবান্ধা শহর ও লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়ক বন্যায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি শুক্রবার দুপুর থেকে বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার রাত ৯টায় বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি আরো বৃদ্ধি পেলে ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। তাই ভাটিতে থাকা জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ থেকে যায় তার দায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নেবেন না। চলমান এ বন্যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নতির কোন সম্ভবনা নেই।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তা নদী বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ফ্লাড বাইপাস কেটে দেয়া হবে না। তবে অভার ফ্লো হতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। পাউবো রেড অ্যালার্ট জারি করেছে শুনেছি। তবে জনগণকে নিরাপদ স্থলে সরিয়ে নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা প্রশাসনের সহায়তা চাইলে তা করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড