কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
উত্তরবঙ্গের জেলা কুড়িগ্রামে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শনিবার (৪ জুলাই) একদিনে জেলায় ৪৯ জন করোনা পজিটিভ হওয়ার খবরে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও করোনার উপসর্গে মৃতসহ এই সংখ্যা আরও বেশী। জেলায় এ নিয়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মূলত সময়মতো নমুনা পরীক্ষার ফলাফল হাতে না আসায় এই জটিলতা আরও বাড়ছে।
গত ১৫ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত সংগৃহীত ৩৯৬টি নমুনার ফলাফল শনিবার প্রকাশ করেছে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। এতে দেখা যায় ৩৪৩ জন নেগেটিভ। এর মধ্যে ৪ জন ফলোআপ রোগীরও পজিটিভ ফলাফল আসে। ফলাফল পাওয়ার তিন দিন পূর্বেও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে বিলম্বিত এ ফলাফলের কার্যকারিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ওই তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৫ ভাগ এবং আক্রান্তের হার ৭ দশমিক ৩৪ ভাগ। আর সুস্থ হওয়ার হার ৪৬ দশমিক ৬০ ভাগ।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরি ভিত্তিতে সদর হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন প্রয়োজন। দীর্ঘদিন পর সংগৃহীত স্যাম্পলের ফলাফল পেয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ তার আগেই এসব রোগী অনেকের মাঝে ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ ফলাফল আসার আগেই মারা যাচ্ছেন। মূলত নমুনা সংগ্রহের দিন থেকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগের ক্লোজ মনিটরিং ও সমন্বয়।
তিনি বলেন, কন্ট্রোল রুম খুলে কর্তাব্যক্তিদের নিজ উদ্যোগে নিজস্ব চ্যানেলের মাধ্যমে ফলাফল সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু এখন যে পদ্ধতিতে ১৫ থেকে ১৮দিন পর ফলাফল আসছে, তা কোনো কাজে আসছে না। এতে সংক্রমণ রোধ করা যাবে না। নমুনা সংগ্রহের দিন থেকে আইসোলেশন বাধ্যতামূলক করলে ফলাফল ভালো হবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান দৈনিক অধিকারকে জানান, রংপুর পিসিআর ল্যাব থেকে শনিবার কোভিড-১৯ আক্রান্তের খবর মিলেছে ৪৯ জনের। এর মধ্যে ২ জন ফলাফল আসার আগেই মারা গেছেন। ফলাফল এসেছে ৩৯৬টি। এর মধ্যে নেগেটিভ ৩৪৩ জনের। এছাড়া ফলোআপ রোগী ৪ জনের পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া গেছে। এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১৫ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের একজন নারী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার এবং ২ জন পুরুষ চিলমারী উপজেলার।
ইন্সপেক্টর আব্দুল জলিলের মৃত্যুর ব্যাপারে সিভিল সার্জন বলেন, তিনি কুড়িগ্রামে করোনা পজিটিভ হলেও মারা গেছেন বগুড়া হাসপাতালে। তাকে সেখানেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত অন্যদের ব্যাপারে পিসিআর এর প্রাপ্ত ফলাফল ছাড়া আমাদের বলার কিছু নেই।
আরও পড়ুন : ভাইয়ের ছোড়া বল্লমের আঘাতে বোনের মৃত্যু, আটক ৩
সিভিল সার্জন আরও বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় তিন হাজার ১৮৪ জনের স্যাম্পল সংগ্রহ হরে রংপুর পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭৭৯ জনের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে ২০৬ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯৬ জন। এছাড়া বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১০৬ জন। পাশাপাশি আইসোলেশনে আরও ২ জন রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত ৪০৫টি নমুনার ফলাফল পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড