• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : ৪ জনের মৃত্যু

  কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

০২ জুলাই ২০২০, ১১:৫০
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি

কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে নদনদীর পানি। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চর ও নিম্নাঞ্চলে এখনো পানি অবস্থান করায় ঘরে ফিরতে পারছে না বানভাসিরা। বন্যায় বুধবার সকালে জামাল ব্যাপারী (৫৫) নামে এক ব্যক্তিসহ পানিতে ডুবে মারা গেছে আরো ৩শিশু। টানা ৫দিন ধরে বন্যার পানি অবস্থান করায় দুর্ভোগে পরেছে বানভাসিরা। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সংকট। চাহিদার তুলনায় সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় বানভাসিদের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বুধবার দুপুরে ব্রহ্মপূত্রনদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬০ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫১ এবং ব্রিজ পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে ডুবে চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের গয়নারপোটল গ্রামের জামাল ব্যাপারী (৫৫) বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। এছাড়াও বন্যার পানিতে ডুবে চারদিনে আরো ৩শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জানজায়গির গ্রামের সাইফুল ইসলামের পুত্র মোস্তাকিম (১৪মাস)। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিজেদের ঘরে বন্যার পানিতে পড়ে মারা যায়। সোমবার বিকালে পানিতে ডুবে মারা যায় নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের বেলাল হোসেন (৮)। সে ঐ গ্রামের আমীর হোসেনের পুত্র। বাড়ির পাশে দোকান থেকে বিস্কিট কিনতে গিয়ে রাস্তার পাশে বন্যার কারণে ভেক্সে যাওয়া গর্তে পড়ে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া চিলমারী উপজেলায় শান্ত ইসলাম (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে চিলমারী সদর ইউনিয়নের কড়াইবরিশাল গ্রামের জাহেদুল ইসলামের পুত্র। নিহত শান্ত গত রোববার কলার ভেলায় করে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় ৩টি পৌরসভাসহ ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৫৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬২ হাজার ৪শ’ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। বন্যায় ভাঙনে বিলীন হয়েছে ২ হাজার পরিবার। বন্যার ফলে ৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর আবাদি জমির ফসল নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ১শ’টি। এছাড়াও প্রায় ৩০ কিলোমিটার বাঁধ ও ৩৭ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে বন্যার ফলে কর্মহীন হয়ে পরেছে কর্মজীবী শ্রমিকরা। একদিকে কাজ নেই অপরদিকে ত্রাণের স্বল্পতা। জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে ৩হাজার পানিবন্দী মানুষের মধ্যে মাত্র ৬শতাধিক পরিবারকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। ২হাজার ৪শ’ মানুষের কাছে পৌঁছেনি ত্রাণ। ওই এলাকার নীলকণ্ঠ গ্রামের ছামসুল (৪৫) জানান, দিনমজুরই করি খাই। ৪দিন থাকি পানিবন্দী। এখন কি খায়া বাঁচি।

একই এলাকার উমর ফারুক (৪২) জানান, মাটি কাটা, বালু তোলার কাজ করি। বন্যার ফলে কাজ নাই। যা আছে তাই দিয়ে চলছে সংসার। কামাই না হওয়ায় কিছু কেনাকাটাও করা যাচ্ছে না। ভালমন্দ খাওয়ার জন্য বাচ্চাগুলো কাঁন্দে।

কলাতিপাড়ার মনোয়ারা (৪০) জানান, হামরাগুলা ত্রাণ পাই নাই। মুই বিধবা বেটিছওয়া। বেটাক নিয়া থাকং। দুপুর হয়া গেইল। এলাও চুলাত আগুন জ্বলে নাই। হামাকগুলাক কাঁইয়ো দেখে না।

এমন নানান অভিযোগ আর অনুযোগ রয়েছে বন্যার্তদের মাঝে। জনপ্রতিনিধিদের সীমাবদ্ধতা থাকায় সবার কাছে পৌঁছতে পারছেন না। ফলে তারাও রয়েছেন প্রচণ্ড চাপে।

উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মাস্টার জানান, ভাই বাড়িত ঘুমাইতে পারি না। ভোর রাত থেকে মাঝরাত পর্যন্ত মানুষ বাড়ি ঘিরে রাখে। এছাড়াও মাঝরাতে কেউ বিপদে পরলে তাকে উদ্ধার করার জন্য নৌকা পাঠাতে হয়। এমন দুর্ভোগের মধ্যে কাটছে আমাদের দিন। এবার সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলেও, বেসরকারিভাবে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি। এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর পাশে কলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, জেলার দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য ৯ উপজেলায় ৩০২ মে.টন চাল ও ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। যা বিতরণ পর্যায়ে রয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড