গাজীপুর প্রতিনিধি
আসমা খাতুন ১৪ বছরের এক কিশোরী। এই বয়সে যখন তার দুরন্ত কিশোরীপনায় ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। কিন্তু দারিদ্র্যতার অভিশাপে নির্যাতিত হয়ে কাটছে তার এই সময়। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে হারিয়ে ফেলেছে তার দুরন্ত কৈশোর। সারা শরীরে বড়লোক নামের হিংস্র হায়েনাদের করা আঘাতের অসংখ্য পোড়া ঘাঁয়ের ক্ষতচিহ্ন। এইটুকু শরীরে আর কত টুকুই শক্তিই থাকে। কিন্তু তারপরও দীর্ঘ এক বছর যাবত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কবলে পড়ে কৈশোরীপনা যেন আর অবশিষ্ট নেই। অমানুষিক নির্যাতনের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েও তার মুখে গত দুদিনেও ফুঁটেনি কোন হাঁসি। বিভৎস হায়নাদের সেই নির্যাতনের কথা মনে হলে ঢুকরে কেঁদে মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। আবার কখনও সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিশাপ করছেন হিংস্র এসব হায়েনাদের নামে। পৃথিবীটা তার কাছে বড়োই নিষ্ঠুর মনে হয় যেন জীবিত থেকেও মৃত পাতালপুরী মনে হয় কিশোরীর।
এমনি হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের ইমান আলীর কিশোরী কন্যা আসমার জীবনে। দারিদ্র্যতার কারণে ইমান আলী ও তার পরিবারের লোকজন একটু সুখের আশায় কিশোরী কন্যা আসমাকে রাজধানীতে গৃহকর্মীর কাজে দিয়েছিলেন ফারসিং নিট কম্পোজিটরের মালিক আবু তাহেরের বাড়িতে।
পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, উত্তরার ৩নং সেক্টরের ৭/বি রোডের ৩১ নং বাড়ির মালিক আবু তাহের ও শাহজাদী দম্পতি। তারা প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজে নেন আসমাকে। কথা দিয়েছিলেন কিশোরী আসমাকে মেয়ের মতো করে রাখবেন। সে কথা তারা রাখেননি। শারীরিক ও মানসিক আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছেন কিশোরী আসমার শরীরটাকে।
নির্যাতিতা কিশোরী আসমা জানায়, কাজের শুরুর দিন গুলো থেকেই তাকে সারা দিন-রাত কাজ করতে হতো। ঘুমানোর ফুরসত পর্যন্ত মিলতো না সেই সাথে কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়লেই মিলতো নির্যাতন। কখনও রাত-দিন মিলিয়ে ১ ঘণ্টা ঘুমানোর সময় পর্যন্ত জন্য দিত না তাহের-শাহজাদি দম্পতি। বাড়ির মালিক আবু তাহের মাঝে মধ্যেই কিল ঘুষি দিয়ে নির্যাতন করতেন, আবার কয়েকবার সিগারেটের আগুনের ছেঁকাও দিয়েছেন কিশোরীর গায়ে। মালিকের স্ত্রী শাহজাদী শরীরে দিতেন গরম তেলের ছিটা। তারপর দগ্ধ ঘাঁয়ের উপর মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দিতেন। এমন ভাবে দীর্ঘ চার মাস ধরে এই কিশোরীর উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। মাঝে মধ্যে নির্যাতন এমন ভাবে চলতো যে, তার চেতনা পর্যন্ত থাকতো না। এমন নির্যাতনের কারণে কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ির মালিক আবু তাহের গাড়ির চালকের মাধ্যমে কিশোরী আসমার হাতে ৫শত টাকা দিয়ে গত ২৯ জুন বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
কিশোরীর মা জোৎসনার ভাষ্য, দারিদ্র্যতার কারণে দুমুঠো ভাত দিতে পারতাম না, লেখাপড়াও করাতে পারছিলাম না। এমন অবস্থায় শিল্প মালিকের বাসায় কাজে দিয়েছিলাম, আশা ছিল অন্তত পক্ষে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে। কিন্তু এখন আমার মেয়েকেই যে নির্যাতন করে প্রায় শেষ করে দিয়েছে। গত ১ বৎসরে তার মেয়েকে দেখতে দেয়নি তারা। মুঠোফোনেও বাড়িতে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এমন অবস্থায় তার মেয়ের উপর নির্যাতনকারীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, তার মেয়ে বাড়িতে আসার পর গৃহকর্তী শাহজাদী কয়েকবার ফোনে হুমকি দিয়েছেন যাতে আমরা বাড়াবাড়ি না করি। অন্যথায় নানাভাবে হেনস্থা করার কথাও বলেছেন। আমরা এখন ভয়ে আছি তাই মেয়ে আসমাকে এক স্বজনের বাড়িতে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
বাড়ির মালিক আবু তাহেরের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান খান জানান, কিশোরীকে সাথে নিয়ে তার পরিবারের লোকজন থানায় অভিযোগ করতে এসেছিল। তবে ঘটনাস্থল রাজধানীর উত্তরা হওয়ায় সেখানের থানায় অভিযোগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড