রিয়াদ হোসাইন, মুন্সিগঞ্জ
মা ময়না বেগম, বোন মুক্তা আক্তার ও বন্ধু রিপনকে সাথে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় রিফাত। সোয়া নয়টার সময় লঞ্চটি যখন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের কাছে আসে, তখন হুইসেল বাজায়। রিফাত, তার মা ও বোন ঘাটে নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অন্যদিকে বন্ধু রিপন লঞ্চের ছাঁদে মুক্ত আকাশে নির্মল বাতাস উপভোগ করছিল। হঠাৎ করে পেছন থেকে ময়ূর-২ নামের লঞ্চটি ধাক্কা মারে। মুহূর্তে মধ্যে লঞ্চটি উল্টে বুড়িগঙ্গার পানিতে তলিয়ে যায়।
মায়ের হাত ধরার চেষ্টা করলে পায়ে, হাতে ও ঘাড়ে রিফাত আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে রিফাত অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখেনি। যত গভীরে ডুবে যাচ্ছে রিফাতকে ততই অন্ধকার চারিদিক থেকে গ্রাস করে নিচ্ছে। তখন রিফাত বেঁচে থাকার আসা ছেড়ে দেন। তবে, অলৌকিকভাবে নিজেকে পানির ওপরে দেখতে পান রিফাত। সে সময় সে তার মা ও বোনের জন্য পানিতে অপেক্ষা করেন কিন্তু মায়ের ব্যাগ ভেসে উঠলেও মা উঠেনি। পরে উদ্ধারকারী নৌকাতে উঠেন রিফাত সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
এমনটাই বলছিলেন, বুড়িগঙ্গা নদীতে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মনিংবার্ড ও ময়ূর-২ নামক লঞ্চ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা রিফাত আহমেদ। রিফাত আহমেদের বাবা থাকেন মালয়েশিয়ায়। তবে, কপাল পুরা রিফাতের বাবার সাথে তার পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই গত ৫ বছর যাবত। রিফাতের মা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অন্যদিকে রিফাত এসএসসি পাস করার পর অর্থ অভাবে আর পড়াশোনা চালাতে পারেনি। পরে রিফাত একটি জুতার দোকানে কাজ করে মায়ের পাশাপাশি সংসারের হাল ধরেন। তার উপার্জনের টাকা দিয়ে মা ও ছোট বোনকে নিয়ে পুরাণ ঢাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
কিছুদিন আগে মা আর বোনকে নিয়ে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার আমতলী এলাকায় নানা রাজ্জাক শেখের বাসায় বেড়াতে যান। এদিকে, জুতার দোকানের চাকরি রিফাতকে তৃপ্তি দিচ্ছে না । প্রয়োজন ভালো একটি চাকরি, তাই রিফাতের মায়ের উদ্দেশ্যে ছিলো এবার গিয়ে ছেলের জন্য ভালো একটি চাকরি জোগার করে দেওয়া । যাতে ছেলের ভবিষ্যতে কষ্ট না করতে হয়। সে স্বপ্ন নিয়ে মা ময়না বেগম ঢাকা গেলেও তার স্বপ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে বিলিয়ে গেলো।
রিফাত আহমেদ বলেন, আমার আম্মু চাইতেন, আমি যেন ভালো একটা চাকরি করি। চাকরি করার পাশাপাশি আমি লেখাপড়াও করি। আমার বোনও লেখাপড়া করে। করোনার কারণে আমরা ঢাকা থেকে গ্রামে যাই। আমার আম্মু সব সময় বলতেন, “ভালো মানুষ হও।” আম্মুর কথার অবাধ্য কখনো আমি হইনি। এখন আমার আম্মু কোথায় হারিয়ে গেল। আমার বোন মুক্তা কোথায় হারিয়ে গেল। লঞ্চের খামখেয়ালির কারণে আজ আমি আমার মাকে হারালাম, বোনকে হারালাম। আমার মা আর বোন এখন কেবলই ছবি। আমার পরিবার যারা তছনছ করল, তাদের আমি কঠিন শাস্তি চাই।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড