টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল হওয়া ৯ জনের মধ্যে ছয়জনের ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। বাকি তিনজন ভাতার আওতাভুক্ত নন বলে উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে।
সরকার এক হাজার ১৮১ জনের মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ বাতিল করে। গত ৭ জুন তাদের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই তালিকায় মির্জাপুর উপজেলার ছয়জন ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাসহ ৯ জনের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় একজন জেল হাজতে রয়েছেন এবং একজন মারা গেছেন।
তবে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল হওয়া ৯ জনের মধ্যে দুইজন নিজেদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করলেও একজন মুক্তিযোদ্ধাদের সহকারী হিসেবে নিজেকে দাবি করেছেন। এছাড়া অন্যদের পরিবারের সদস্যরা গেজেট বাতিল হওয়াদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেছেন। গেজেট বাতিল হওয়ার পর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে তাদের প্রাপ্ত ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকার উপজেলার আনাইতারা ইউনিয়নের আতিয়া মামুদপুর গ্রামের শুকুর ব্যাপারীর ছেলে ময়শের আলী, বহুরিয়া ইউনিয়নের বেত্রাসিন গ্রামের খোরশেদ আলী মিয়ার ছেলে শাজাহান মিয়া, উয়ার্শী ইউনিয়নের নতুন কহেলা গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে রবিউল আওয়াল, বরোটিয়া গ্রামের আবুল হোসেন খানের ছেলে আবদুল জব্বার, আউটপাড়া গ্রামের রাহাজ উদ্দিনের ছেলে এ বি সিদ্দিক, ভাতগ্রামের মর্তুজা আলীর ছেলে আমজাদ আলী, বানাইল ইউনিয়নের ভাবখন্ড গ্রামের এরশাদ খানের ছেলে কামরুজ্জামান, ফতেপুর ইউনিয়নের শুভুল্যা গ্রামের নাজিম উদ্দিন মোল্লার ছেলে শহিদুর রহমান এবং বিমান বাহিনীতে যোগদানকৃত উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের কদিম ধল্যা গ্রামের কাজি হাবিবুর রহমানের ছেলে কাজি মাহমুদুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল হওয়া উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শুভুল্যা গ্রামের শহিদুর রহমানের স্ত্রী মিসেস জোহরা বেগম জানান, তার স্বামী বিডিআর’র সুবেদার। তিনি গত ছয় বছর যাবত ভাতা পাচ্ছেন। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কাশিমপুর কারাগারে আছেন। বিডিআরের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে তার নামের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও স্থগিত করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল হওয়া শাজাহান মিয়া বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ করেনি। তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমাদের বাড়িতে ৩-৪ মাস ক্যাম্প ছিল। ওই সময় আমি ইপিআর সদস্য প্লাটুন কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। কিভাবে আমার নাম গেজেটভুক্ত হয়েছে তা আমি জানি না। এ কারণে আমি ভাতার আওতাভুক্ত হইনি।
মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল হওয়া এ বি সিদ্দিকী জানান, ১৯৭২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি বিডিআরে যোগদান করেন। এর আগে তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার ধামরাই উপজেলার মকীমপুর গ্রামের সুলতান উদ্দিন আহমেদের অধীনে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কোম্পানি ভিত্তিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র জমা দেন। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ভাতা পান বলে জানান।
মৃত আব্দুল জব্বারের বড় ছেলে সুমন হোসেন জানান, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে ভাতা পান। কয়েকমাস আগে বিডিআর (বিজিবি) থেকে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, আব্দুল জব্বারের নামের গেজেট বাতিল করা হবে। তার নাম সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় গেজটভুক্ত করা হবে। তার বাবা ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর মারা গেছেন। বর্তমানে বাবার ভাতা স্থগিত রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন : করোনাকালে ‘লাম্পি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশু
মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল হওয়া রবিউল আওয়াল জানান, তিনি ২০১৩ সাল থেকে ভাতাসহ সকল প্রকার সযোগ সুবিধা পেয়ে আসছেন। প্রয়াত খন্দকার আব্দুল বাতেন বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার ইপিআর সদস্য আলাউদ্দিন খানের অধীনে তিনি বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হুমায়ুন কবীরের কাছে ট্রেনিং নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একই মাঠে মেজর আজিজের কাছে অস্ত্র জমা দেন। স্বাধীনের পর আতাউল গণি ওসমানের দেয়া মুক্তিযোদ্ধের সার্টিফিকেট (৯০৮৭৫) নিয়ে ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে বিডিআরে যোগদান করেন। ২০০৫ সালের মে মাসে অবসর নেন। ২০০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিডিআর গেজেট প্রকাশ করে। ওই গেজেটে তার নাম রয়েছে। গেজেট নম্বর ৬৮৭৬। ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে তিনি ভাতা পান।
মির্জাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম জানান, মির্জাপুরে বিডিআর ও বিমান বাহিনীর ৯ জনের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল করা হয়েছে। ছয়জন ভাতার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদের মধ্যে একজনের লাল মুক্তিবার্তা নম্বর রয়েছে। তিনজনের সাময়িক সনদ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তাদের ভাতাসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা স্থগিত থাকবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড