• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাস্তব জীবনের 'সুপার হিরো' নরসিংদীর এসিল্যান্ড শাহ আলম মিয়া

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

২৭ মে ২০২০, ১০:০৩
নরসিংদী
নরসিংদী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলম মিয়া

বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ করোনা ভাইরাস মহামারীতে আতঙ্কে মানুষ আজ ঘরে বন্দী। একটু অসাবধানতায় জীবন পড়তে পারে চরম বিপর্যয়ের মুখে এমনকি জীবন প্রদীপ ও নিভে যেতে পারে। ঠিক এমন সময় নিজের দায়িত্ববোধ থেকে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য নিজের কথা না ভেবে দিনরাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।

বলছিলাম নরসিংদী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলম মিয়ার কথা।

নিজের দাপ্তরিক কাজের বাইরেও করোনা প্রতিরোধ সেল নরসিংদী সদর উপজেলার কুইক রেসপন্স টিমের আহবায়ক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এই ভয়াবহ মহামারীতে সাধারণ মানুষকে ঘরে ফেরানোর কার্যক্রম থেকে শুরু করে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করণ, ভেজাল বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ত্রাণ বিতরণ, ‘করোনা’ উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ, আক্রান্ত রোগীর বাড়ী লকডাউন, হাসপাতালে নেয়া, খাওয়া- দাওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করন, করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তার সৎকার সম্পন্ন করা, কখনো কৃষকের মাঠে ধান কেটে দেওয়া, কখনো মাস্ক, সেনিটাইজার বিতরণসহ সবই করে চলেছেন তিনি সিদ্ধহস্তে। একই মানুষের দিনরাত একসাথে এতো দায়িত্ব পালন, এ যেন গল্প, সিনেমার হিরোদেরকেও হার মানায়। সবকিছু ছাপিয়ে তার অতি মানবিক গুণ ও কর্মদক্ষতায় তিনি নরসিংদীতে সবার মাঝে হয়ে ওঠেছেন একজন "বাস্তব জীবনের সুপার হিরো"।

একজন অদম্য সাহসী ও স্বাধীনচেতা তরুণ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ইতিমধ্যেই তিনি নরসিংদীর মানুষের মনে সম্মানের জায়গায় আসীন হতে সক্ষম হয়েছেন। ঘরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আর বয়স্ক মাকে রেখেও নিজের দায়িত্ববোধ আর মানবিকতার তাড়নায় তিনি দিনরাত অবিরাম ছুটে চলেছেন নরসিংদীর প্রান্তিক জনপদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ভয়ঙ্কর করোনা মহামারীতে নিজের স্বজনরা পর্যন্ত যেখানে তাদের আক্রান্ত প্রিয়জনকে ফেলে চলে যাচ্ছেন, সেখানে ভয়কে জয় করে পরম মমতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিত্যদিনের চিকিৎসা, খাওয়া-দাওয়া, প্রতিবেশীদের অবহেলা ও দুর্ব্যবহার থেকে রক্ষা সহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করছেন তিনি। এমন কি আক্রান্তদের মৃত্যুর পরও জাত-ধর্ম ভেদ না করে নিজেই উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করছেন শেষ বিদায়ের কার্যাদি। এ পর্যন্ত তিনি হিন্দু মুসলিম মিলিয়ে লাশ সৎকার করেছেন প্রায় ৮টি। এছাড়াও সদরের করোনা আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করাসহ লকডাউনকৃত বাড়ির সামনে তার দরদ ভরা কণ্ঠে "করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি কোন অপরাধী নন,তিনি একটি দুর্যোগের বা পরিস্থিতির শিকার মাত্র। তাই ভালবাসা, মানবতা ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করুন" এই আহ্বান এখন সবার মুখেমুখে। সবমিলিয়ে একের পর এক মহানুভবতার ঘটনায় তিনি হয়ে উঠেছেন নরসিংদীর মানুষের বিশ্বস্ততা ও ভরসার প্রতীক।

২০১৬ সনে ৩৪ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নরসিংদীতে যোগদান করেন এই গুণী কর্মকর্তা। এরপর থেকে তিনি নিজেকে উজাড় করে নরসিংদীর মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। নরসিংদীর সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের সাথে সমানতালে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সততার সাথে তিনি তার দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করে চলেছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে নরসিংদী সদরে তার যোগদানের পর ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং দাপ্তরিক অন্যান্য কাজের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতার জন্য তিনি ভূমি অফিসে আগত সেবা প্রত্যাশী এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ২০১৭ ও ২০১৮ সালে 'আন্তর্জাতিক পাবলিক সার্ভিস ডে' উপলক্ষে পরপর দু’বার নরসিংদীতে সেরা কর্মকর্তা নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে সততা ও কর্মনিষ্ঠার জন্য তিনি জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার অর্জন করেন। এর আগে ২০১৪ সালে কারিতাস বাংলাদেশে কাজ করার সময় তিনি ‘ত্যাগ ও সেবা দিবসে’ শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা নির্বাচিত হন। এছাড়া ২০১৫ সালে বাংলাদেশ কাস্টমসে কাজ করার সময় সেখানেও তিনি সেরা কর্মকর্তার সম্মান অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণসংযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষে ২০১৩ সনের শেষের দিকে কারিতাস বাংলাদেশ'এ কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন শাহ আলম মিয়া। এরআগে কিছুদিন তিনি সাংবাদিকতাও করেন।

নরসিংদী জেলা প্রশাসনে এনডিসি হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ২০১৯ সালে শিক্ষা ক্যাডারের আরেক বিসিএস কর্মকর্তা মাশরুহা জাহান আশাকে তিনি বিয়ে করেন। তার স্ত্রী বর্তমানে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দম্পতির ঘরে প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা রয়েছে। এসময়ে একজন স্বামী হিসেবে তার স্ত্রীর পাশে থাকাটা খুব জরুরি। কিন্তু দায়িত্বের প্রশ্নে একই ছাদের নিচে থেকেও তিনি বিচ্ছিন্ন রয়েছেন পরিবার থেকে। কাছ থেকে প্রিয়তমা স্ত্রী ও গর্ভধারিণী মায়ের সাথে পর্যন্ত একসাথে বসে কথাবার্তা বা খাওয়া দাওয়া হয় না দীর্ঘদিন যাবত। কারণ তিনি করোনা রোগীদের সংস্পর্শেই বেশিরভাগ সময় থাকেন। তাই তিনি নিজের থাকার রুম থেকে শুরু করে খাবার দাবারের জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড় সবই আলাদা করে নিয়েছেন। নরসিংদীর জনপদের মানুষকে নিরাপদ রাখতে তিনি নিজের ভোগবিলাসকে উৎসর্গ করে পরিবার থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখছেন। "নরসিংদী জেলা প্রশাসনে দায়িত্বশীল আরো কর্মকর্তা থাকতে নিজের সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে একা রেখে আপনিই কেন দায়িত্ব পালন করছেন এবং আপনার পরিবারই বা কিভাবে নিচ্ছে এটা?" এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ। অন্যদের ব্যাপারে আমার কোন মন্তব্য অমূলক। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদর্শের প্রতি আমার দুর্বলতা রয়েছে। তার ইচ্ছা জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা। আর এ নির্দেশনাটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছেন নরসিংদীর মান্যবর জনবান্ধব জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমার মাতৃতুল্যা অভিভাবক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। যেকোনো পরিস্থিতিতে দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করার মতো করে তিনি আমাকে নিজে হাতে তৈরি করেছেন। আমাকে হাতে কলমে কাজ শিখিয়েছেন, মানবিক হতে সাহস যুগিয়েছেন, পরিশ্রমী হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড