ঝালকাঠি প্রতিনিধি
এক যুগ আগের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের মতো প্রবল শক্তিতে উপকূলীয় অঞ্চলে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’। অপ্রতিরোধ্য দুর্বার গতিতে ধাবমান বিধ্বংসী ক্ষমতার সাইক্লোনটির মুখ ও স্থলভাগে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ঝালকাঠিসহ উপকূলীয় ১৪ জেলায়। মঙ্গলবার শেষ রাত কিংবা আগামীকাল বুধবার নাগাদ আঘাত হানতে পারে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে।
এতে উল্লেখ করা হয়, দেশের সমুদ্র তীরবর্তী উপকূলীয় ১৪টি জেলা এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম। বুলেটিনে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এক জরুরী সভা করেছে। এতে জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলীর সভাপতিত্বে সভায় জেলার সব সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, জেলার সব সাইক্লোন শেল্টার, বিদ্যালয় এবং পাকা ভবনসহ ঝালকাঠি জলোয় মোট ২৭৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রস্তুত রাখা হয়েছে । শুকনো খাবার ও চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনরে প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেয় হয়েছে। জানমালের যাতে কোনো প্রকার ক্ষতি না হয় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিকেল থেকেই রেডক্রিসেন্ট ও স্কাউটস সদস্যরা ট্রলারে করে নদী উপকূলের বাসিন্দাদের সাইক্লোন শেল্টারে অথবা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে সচেতনতামূলক মাইকিং করছে।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুরের পর অতি ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সামান্য উত্তর দিকে সরে এসেছে। এজন্য গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং প্রবল শক্তি সঞ্চয় করছে। এটি কিছুটা দিক পরিবর্তন করে উত্তর, উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি ১৯ মে শেষ রাত থেকে কাল ২০ মে বিকাল এই মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। আম্ফানের প্রভাবে স্থানীয় উপকূলবর্তী এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় যখন অতিক্রম করবে, সেখানে বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল জেলা এবং আরও যে দ্বীপ ও চরগুলো আছে সেখানে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আরো জানা যায় যে, আম্ফানের ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিতে পানি ক্রমান্বয়ে ফুঁসে উঠছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এটা ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার এবং ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের সর্বোচ্চ গতিবেগ ২২৩ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি। সন্ধ্যা ৭টায় আম্ফান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার কিলোমিটার, কক্সবাজার, মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, তীব্রতার মাপকাঠিতে এই ঘূর্ণিঝড় এর মধ্যেই অনেক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আম্ফানের স্থলভাগে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সুন্দরবন অংশ। কেন্দ্রবিন্দু যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে আম্ফানে ক্ষতি কম হবে। তবে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবর্তন হয়ে সুন্দরবন ছাড়া দেশের অন্য অংশে আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
সেন্টার যদি সুন্দরবন হয়, তাহলে তো ওই স্পিডে (১৪০-১৬০ কিলোমিটার) কোনো ক্ষতি হবে না। ওই সেন্টার যদি আবার পটুয়াখালী হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হবে। এজন্য আগে লোকেশন ঠিক করতে হবে। সেজন্য লোকেশনকে ফিক্সড (স্থান) করার পরে স্পিডের (ঘূর্ণিঝড়ের গতির) কথা আসবে। আম্ফান এর মধ্যেই ঘণ্টায় দেড়শ কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগসম্পন্ন ঝড়ো বাতাস সঙ্গে ‘প্যাক’ করে নিয়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা একটা ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, সেটাও একটা রেকর্ড। উপকূলের কাছাকাছি এলে এই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা সামান্য কমবে। তবে তার পরও এর বিধ্বংসী ক্ষমতাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
অপরদিকে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতকৃত ২৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার আগ্রহ নেই এলাকাবাসীর। দুপুর ১টা থেকেই ঝালকাঠিতে থেমে থেমে ধমকা বাতাস ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বিষখালিসহ অন্যান্য নদীর তীরে স্বাভাবিকের চেয়ে ২/৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ এবং দূর পাল্লার সকল রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিলেও আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে যাচ্ছে না নদী তীরের মানুষ। সুপার সাইক্লোন আম্ফান মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ২৭৪ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদী তীরবর্তী জন সাধারণকে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ায় জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ তুলনামূলক খুবই কম আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন। জেলায় ৫ টি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার খবরে জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি। বিভিন্ন হাসপাতাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে জরুরি সেবা দানের ব্যবস্থা গ্রহণ, রেডক্রিসেন্ট ও এনজিওর ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড