• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দেশের একমাত্র লাল তেঁতুল গাছ খোকসার হিজলাবটে!

  মনিরুল ইসলাম মনি

১৮ মে ২০২০, ২২:৫৪
লাল তেঁতুল
খোকসার লাল তেঁতুল (ছবি : সংগৃহীত)

‘তেঁতুল বটের কোলে/দক্ষিণে যাও চলে/ঈশান কোণে ঈশানী/কয়ে দিলাম নিশানী’- গুপ্তধন নেই, তবে এমন জিনিস রয়েছে যেটা দেখলে মন আর মুখ, দুইই বলে উঠবে আহা! কতটা উত্তরে বা কতটা দক্ষিণে সেটা না বললেও চলবে।

তেঁতুল দেখে জিহ্বায় পানি আসে না- এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর সেই তেঁতুলের রঙ যদি হয় লাল, তাহলে অবস্থাটি কী দাঁড়াবে একটু চিন্তা করে দেখেছেন! কুষ্টিয়ার খোকসায় এমন এক তেঁতুল গাছ আছে যার রঙ লাল। সত্যিই অবাক করার মতোই লাল রঙা তেঁতুল!

খোকসার হিজলাবটের ঐতিহ্যবাহী সেই লাল তেঁতুলগাছ (ছবি : সংগৃহীত)

তবে এই তেঁতুলের বীজ থেকে অন্য কোথাও চারা হয় না। আর বাংলাদেশে সম্ভবত এমন লাল রঙের তেঁতুল গাছ আর কোথাও নেই। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাট এলাকায় এমন একটি গাছ রয়েছে। তবে সেটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি বলে জানা যায়।

তবে এই তেঁতুলের রঙ লাল হলেও বাইরের অংশটি অন্য সাধারণ তেঁতুলের মতোই। তবে তা ভাঙলেই লাল টকটকে তেঁতুল। তবে এলাকায় প্রচলিত আছে- এই তেঁতুলের অলৌকিকতা নিয়ে। বিষ্ময়কর এই তেঁতুল নিয়ে স্থানীয়দের জল্পনা কল্পনারও শেষ নেই।

এলাকাবাসীর মতে, গাছটির বয়স ৩০০ বছর কিংবা তারও বেশি। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন তেঁতুল গাছ এটি। যার তেতুঁলের রং টকটকে লাল। এই লাল রঙা তেঁতুল গাছটি দেখলেও অবাক হতে হয়!

বটগাছের মতো বিশালাকার এই তেঁতুলগাছ। আকারে প্রায় ২৫ফুট ব্যাসার্ধ ও লম্বায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট। এই গাছের জন্ম কবে তাও কারো জানা নেই।

স্থানীয়দের মতে, এই গাছতিনটির পাশেই রয়েছে নীলকুঠি। ধারণা করা হয়, এই গাছটির বয়স নীলকুঠির চেয়েও বেশি। সেখানে তিনটি গাছ রয়েছে। তার মধ্যে একটি গাছের তেঁতুলের রঙ ভিতরে সাদার বদলে লাল।

এই লাল তেঁতুল গাছ আমাদের দেশে বেশ দুর্লভ। ওই গ্রামের স্থানীয় বয়স্করাও ছোটবেলা থেকেই এই গাছগুলোকে একই রকমের দেখে আসছেন।

তাদের মতে, এই গাছগুলোর বয়স ৩০০ বছর বা তারও বেশি। ঝড়ে ভেঙ্গে গিয়ে বড় গাছটি এখন ছোট হয়ে গিয়েছে আগে আরও বড় ছিল।

তাই এলাকাবাসী এই রক্তলাল তেঁতুল গাছের ডাল কাটতে এমনকি পাতা ছিঁড়তেও ভয় পায়। অনিষ্ঠ হয় ভেবে কেউ এই গাছের ডালও কাটে না।

গাছে ঝুলছে লাল তেঁতুল (ছবি : ইন্টারনেট)

রানারঘাটের বাসিন্দারা বলেন, ওই লাল তেঁতুল গাছটির বয়স প্রায় ৫০০ বছর। ওই গাছটিকেও অলৌকিক ভাবা হয়। গাছটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে একজন মুসলিম পীরের কাহিনী। সেই পীর নাকি এই লাল রঙা তেঁতুল দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করতেন। শুধু তাই নয় কবিরাজ হিসেবে পানি, তেল পড়া দিয়ে তিনি নাকি বহু মানুষের রোগ নিরাময় করেছিলেন।

সেখানকার আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে এই পীরবাবার কথা। শুধু মুসলিম নয়, দূরদূরান্ত থেকে নানা ধর্মের মানুষ আসতে শুরু করেন তার কাছে। পীরবাবার মৃত্যু হলে তেঁতুল গাছের নীচেই তাকে সমাহিত করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এরপর থেকে সেই গাছে লাল তেঁতুলের ফলন শুরু হয়।

এরপর থেকে সেখানকার নাম দেওয়া হয় আজগুবি তলা। লাল তেঁতুল খেতেও নাকি চমৎকার। এর টক-মিষ্টি স্বাদ অন্যান্য তেঁতুলের থেকেও শতগুণ ভালো। এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর। ভারতের ওই লাল তেঁতুল গাছ থেকে যদি তেঁতুল মাটিতে পড়ে তবেই নাকি তারা সেটি খায়।

গাছ থেকে পাড়ার অনুমতি নেই কারো। এই নিয়ম মেনে চলেন এলাকার সবাই। প্রতি শুক্রবার দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা মনোবাসনা পূরণে কেউ ঢিল বাঁধেন, কেউ গরুর দুধ দিয়ে পূজা দেন।

ধারণা করা হয়, নদীয়া থেকে সেই পীরের কোনো মুরীদের মাধ্যমেই খোকসার হিজলাবটের লাল তেঁতুলের আগমন ঘটে।

এই লাল তেঁতুলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা খুবই ভালো। কারণ খাদ্য ও ওষুধ শিল্পে এই লাল বায়োকালারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণে ও কনফেকশনারিতেও এই লাল রংটি ফুড কালার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

লাল তেঁতুলের ভেতরের অংশ (ছবি : ইন্টারনেট)

বিজ্ঞানীদের দাবি, এর বীজ থেকে তৈরি তেল টেক্সটাইল ও পেইন্ট শিল্পে বেশ কার্যকরী। এই গাছের চাষে বেশি পানিরও প্রয়োজন হয় না। খরাপ্রবণ অঞ্চলেও এই লাল তেঁতুল গাছের ভালো ফলন হয়ে থাকে। এদিকে বিজ্ঞানীরা অবশ্য লাল তেঁতুলের অলৌকিকতা মেনে নেননি।

এই তেঁতুলগাছ সম্পর্কে আরও জানা যাবে খোকসার উপর নির্মিত প্রথম প্রামাণ্যচিত্র আমার খোকসাতে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড