• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নরসিংদীর যুবককে পিটিয়ে হত্যার মূল ঘটনা উদঘাটন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ মে ২০২০, ২২:১০
নরসিংদী
নরসিংদী

সম্প্রতি নরসিংদীর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক গ্রামীন দর্পণের ফেসবুক পেজে- ঘোড়াশালে চুরির অপরাধে যুবক পিটিয়ে হত্যা পুলিশের শিরোনামে এবং নরসিংদী প্রতিদিন নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে-ঘোড়াশাল ফাঁড়িতে নেয়ার পর মৃত্যু, অভিযোগ পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, যেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ওই সংবাদ দুটিতেই উল্লেখ করা হয় যে বিকাল ৫ টার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলা ও পলাশ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার ভাটপাড়া কদমতলা নামক স্থান থেকে ঘোড়াশাল ফাঁড়ির দুই পুলিশ সদস্য মান্নানকে ধরে নিয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পর তার আশপাশের এলাকার সিএনজি চালক ও ইজিবাইক চালক মান্নানকে ঘোড়াশাল ফাঁড়িতে গিয়ে দেখে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলেছে। এই অবস্থায় আশপাশের লোকজনের সহায়তায় তাকে ঘোড়াশালের রৌশন জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

উক্ত সংবাদ দুটিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলম জানিয়েছেন, তাকে একটি চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসলে সে হঠাৎ পড়ে যায়। এই অবস্থায় তাকে ঘোড়াশালের রৌশন জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার স্ট্রোকে মারা গেছে বলে জানায়।

পুলিশ জানায়, মূল ঘটনার সাথে দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কোনো প্রকারের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুটি পত্রিকার কোনো স্টাফ রিপোর্টার বা প্রতিবেদকের সাথে ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলমের কোনো ধরনের কথায় হয়নি।

বস্তুত মৃত মান্নান ঐ দিন দুপুরে তার শ্যালক মিলনসহ মাধবদী শেখেরচর বাজার হতে কাপড় নিয়ে গাজীপুর জেলার টঙ্গীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। দুপুর আনুমানিক আড়াইটায় ঘোড়াশাল চেকপোষ্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দাঁড় করান। তাদের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের যেতে না দেয়ার কারণে তার শ্যালক মিলন পুলিশের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। এর একপর্যায়ে মান্নান তার সিএনজি চালিয়ে দ্রুত ঘোড়াশাল ব্রীজের উপর দিয়ে কালীগঞ্জ, গাজীপুরের দিকে পালিয়ে যান। ঘোড়াশাল ব্রীজ পার হওয়ার পর সে মিলনের জন্য সিএনজি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।

অনুমান ৩টার দিকে কালীগঞ্জের দিক হতে কালীগঞ্জ থানার টহলরত পুলিশের একটি পিকআপ গাড়ি ব্রিজের দিকে আসতে দেখে মান্নান সিএনজি নিয়ে কালীগঞ্জ থানাধীন বাইপাস রোড দিয়ে জামালপুর রোডের দিকে চলে যান। কালীগঞ্জ থানা পুলিশের পিকআপটিও সে সময় ঐ একই পথে টহল দিতে দিতে সিএনজির পিছনে পিছনে জামালপুর রোডের দিকে যেতে থাকলে মান্নান মনে করেন পুলিশ পিকআপটি তাকে ধাওয়া করছে।

এতে তিনি কিছুদূর গিয়ে বাম দিকের একটি সরু রাস্তা দিয়ে খলাপাড়া গ্রামের ভিতর দিকে গিয়ে ফিরোজ মিয়ার বাড়ির সামনে থামেন। ঐ সময় পুলিশ পিকআপটি সোজা জামালপুরের দিকে চলে যায়। তখন ফিরোজ মিয়াসহ স্থানীয় ফরহাদ ভূইয়া (৪৯) তার নিকট উপস্থিত হয়ে তার নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তার নাম ঠিকানা বলেন এবং ঐ গ্রামে মোজাম্মেল হক (৫০) নামে তার বিয়াই আছে বলে জানান।

এতে উপস্থিত লোকজন তার সঙ্গে বেয়াইসুলভ হাস্যরসাত্বক কথাবার্তায় মেতে উঠেন। উক্ত আলাপচারিতার কোনো পর্যায়ে পুলিশ তাকে মেরেছে বলে কোনো বক্তব্য তিনি প্রদান করেননি। এভাবে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে মান্নান হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে উপস্থিত লোকজন তার মাথায় পানি ঢালেন এবং তার বিয়াই মোজাম্মেল হককে সংবাদ দেন।

তারপর মোজাম্মেল হক দ্রুত সে স্থানে উপস্থিত হয়ে মান্নানের বাড়িতে মোবাইল ফোনে সংবাদ দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মিলন মিয়া মান্নানকে ফোন দিলে উপস্থিত ফিরোজ মিয়া ফোনটি রিসিভ করে তার অসুস্থতার সংবাদ জানালে কিছুক্ষণ পর মিলনসহ তার নিকট আত্মীয়রা খলাপাড়া গ্রামে উপস্থিত হন এবং মান্নানকে অজ্ঞান অবস্থায় সিএনজি যোগে প্রথমে ঘোড়াশালস্থ রওশন জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। উক্ত হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত নরসিংদী সদর হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বিকাল অনুমান সাড়ে তিনটায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মান্নানকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ সৃজন, সম্পাদন, প্রকাশ ও প্রচারের অপরাধে পুলিশ পরিদর্শক মো. জহিরুল আলম, ইনচার্জ ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ি বাদী হয়ে দৈনিক গ্রামীণ দর্পণের বার্তা সম্পাদক ও স্টাফ রিপোর্টারসহ নরসিংদী প্রতিদিনের প্রকাশক ও সম্পাদককে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পলাশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লিখিত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছেন বলে জানা গেছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড