এম.কামাল উদ্দিন, রাঙ্গামাটি
২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙ্গামাটির সড়কগুলো আজও ঝুঁকিতে রয়ে গেছে। পড়ে রয়েছে বেহাল অবস্থায়। দফায় দফায় সংস্কার করা হলেও গত তিন বছরে স্থায়ী মেরামত হয়নি। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সড়কগুলো আবারও ধসে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। এ অবস্থায় করোনার মধ্যেও বর্ষার আগেই সড়কগুলোর মেরামত সম্পন্ন করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে (এলজিইডি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ১৩জুন আসলে পাহাড় ধসের তিন বছর হবে।
২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াল পাহাড় ধসের দুর্যোগে সদরসহ জেলায় ১২০ জনের প্রাণহানি হয়। যাদের মধ্যে ছিলেন পাঁচ সেনা সদস্য। এ ছাড়াও ক্ষতিসাধিত হয়েছিল ব্যাপক। বিধ্বস্ত হয় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কসহ জেলার সবকটি অভ্যন্তরীণ সড়ক। এর দীর্ঘ তিন বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও স্থায়ী মেরামত করা হয়নি এসব সড়ক। সড়কগুলো আজও ঝুঁকিতে। আসন্ন বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই সড়কগুলোর মেরামত ও সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক বিশেষ সভায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও জেলা সড়ক বিভাগকে এ নির্দেশনা দেন, জেলা প্রশাসক।
সভায় বলা হয়, দীর্ঘ তিন বছর গত হয়ে গেলেও পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত সড়কগুলোর পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আবার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড় ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কাও ব্যাপক। গত তিন বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সাময়িক মেরামত কাজে কেবল সরকারের অর্থ অপচয় হয়েছে। বছর না ঘুরতেই একটু বৃষ্টি হলেই সাময়িক মেরামত করা রাস্তা ধসে যায়। বিধ্বস্ত সড়কগুলোর স্থায়ী মেরামত ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসক বলেন, করোনার পাশাপাশি রাঙ্গামাটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বর্ষার আগেই রাঙ্গামাটির সড়কগুলোর মেরামত কাজ শেষ করতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং এলজিইডিকে দ্রুত কাজ করতে হবে। এ জন্য প্রশাসনিক কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে তার সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। স্থায়ী মেরামতের জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ১২৮টি স্থানে স্থায়ী মেরামত ও পুনর্নির্মাণ কাজ করতে মন্ত্রণালয়ে ১৭০ কোটি টাকার ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। প্রস্তাবনায় জেলার বিভিন্ন সড়কের ১২৮ পয়েন্টে ৪ হাজার ৭২৫ মিটার পাইলসহ রিটেইনিং ওয়াল এবং স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ ও কিছু সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রস্তাব রয়েছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ির শালবাগানে বিধ্বস্ত অংশে স্থায়ী মেরামত প্রায় শেষের দিকে।
এদিকে ওই পাহাড়ধসের দুর্যোগে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়কটিও পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। পরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামত করে এলজিইডি। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো মেরামত করা হয়, গাছের খুঁটি গেড়ে এবং মাটির বস্তার বাঁধ দিয়ে। যেনতেনভাবে কাজ করায় পরবর্তী বছর বৃষ্টিপাত শুরুতেই ফের ধসে যায় সড়কটির মেরামত করা অংশগুলো। গত বর্ষাতেও ভেঙে যায় সড়কটির বেশকিছু অংশ।
এলজিইডি রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব চৌধুরী বলেন, রাঙ্গামাটি শহরের আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক উন্নয়নের জন্য নকশাসহ প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করতে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক স্থায়ী সংস্কার ও মেরামত করা হবে। সাময়িক মেরামত করায় সড়কটি সচল করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত কাপ্তাই বাইপাস সড়কে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুসহ ১০ কিলোমিটার অংশ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়েছে। রাস্তার দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কার ও ব্যবহার উপযোগী করতে আবার নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো গাছের খুঁটি আর মাটি ভরাট করে কেবল সাময়িক সংস্কার কাজেই ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। অথচ এসব টাকা খরচ করেও ঝুঁকি এড়ানো যায়নি। রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য মতে, রাঙ্গামাটি শহরে ৩৩, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে ৫৬, রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কে ২৬, বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কে ৫ এবং বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়কে ৩ স্থানসহ ১২৮টি স্থানে সড়ক ধসে গেছে। এসব স্থানে স্থায়ী কাজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পাহাড় ধসের পর এসব সড়কের ১১৩ স্থানে ভাঙন ও গর্তের সাময়িক সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় ধসে যাওয়া মূল সড়কের ওপর অস্থায়ীভাবে যান চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে একটি বেইলি সেতু। যার ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড