• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গৌরনদীতে জেলেদের চাল চেয়ারম্যানের স্বজনদের ঘরে

  বরিশাল প্রতিনিধি

০৩ মে ২০২০, ০৯:৫৬
গৌরনদী
ফাইল ছবি

বরিশালের গৌরনদীতে জেলেদের বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তার চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। মরণব্যাধি করোনার দুর্যোগকালীন জেলেদের মাঝে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বিতরণ না করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে কোন কোন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। চালের পরিবর্তে নগদ অর্থ বিতরণ, আত্মীয়, ব্যবসায়ী, বিদেশ ফেরত, প্রবাসী ব্যক্তিদের নাম জেলেদের তালিকাভুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। করেনার এমন ক্রান্তিকালে খাদ্য সহায়তা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে জেলেরা।

গৌরনদী উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৮৫৫ জন কার্ডধারী জেলের নামে খাদ্য সহায়তার সরকারি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৪ মাসে জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০ কেজি চাল দেয়ার নিয়ম রয়েছে।

উপজেলার বার্থী ইউপি সদস্য বজলুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, বার্থী ইউনিয়নে ৮০ জেলের নামে বরাদ্দকৃত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের সরকারি চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহ্জাহান প্যাদা। এ কারণে তার ওয়ার্ডের অধিকাংশ জেলেরা গত ২ মাসের বরাদ্দকৃত ৮০ কেজি চাল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর চেয়ারম্যান শাহজাহান প্যাদা নিজস্ব লোক দিয়ে কয়েকদিন আগে বার্থীসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু সংখ্যক জেলেদের বাড়িতে ৫০০ থেকে এক হাজার করে টাকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জেলেরা অভিযোগ করেন।

বার্থী গ্রামের তালিকাভুক্ত জেলে অমূল্য হালদার, কালাম সরদার অভিযোগ করে বলেন, এ বছর আমরা কোন খাদ্য সহায়তা পাই নাই। জেলে না হয়েও জেলেদের তালিকায় প্রবাসী হালিম সন্যামত, বিদেশ ফেরত হাবুল হাওলাদার, মিজানুর রহমান ও ওরফে মিজান হাওলাদার, ব্যবসায়ী পরিতোষ দত্ত, ইউপি চেয়ারম্যানের চাচা আমিন আর্শেদ প্যাদার নাম রয়েছে। তবে বার্থী ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্যাদা সাংবাকিদের বলেন, তার ইউনিয়নে ৮০ জেলের নামে বরাদ্দকৃত ২ মাসের চাল ১৬০ জন জেলের মাঝে ৪০কেজি করে বিতরণ করেছেন।

শরিকল ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, তাদের না জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেন মোল্লা গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের জন্য বরাদ্দকৃত ১৫০ জন জেলের নামে ৮০ কেজি করে চাল গুদাম থেকে উত্তোলন করেন। কিন্ত বিতরণের সময় তিনি জেলেদের ৮০ কেজির পরিবর্তে নিজের খেয়াল খুশি মতো ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন। তাও আবার কার্ডধারী সব জেলেদের দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।

সাকোকাঠি গ্রামের জেলে দুলাল দাস, অভিযোগ করেন, তারা এ চলতি বছর ৪০ কেজি করে চাল পেয়েছেন। তবে শরিকল ইউপির চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মোল্লা সাংবাকিদের বলেন, তার ইউনিয়নে জেলের সংখ্যা বেশী হওয়ায় তিনি ১৫০ জন জেলের ২ মাসের চাল উত্তোলন করে ৩০০ জেলের মাঝে ৪০ কেজি করে বিতরণ করেছেন।

নলচিড়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা বলেন, তার ইউনিয়নে ৭১০ জনের নাম জেলেদের তালিকায় রয়েছে। এরমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ প্রকৃত জেলে রয়েছে। যখন জেলে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়, তখন অন্য পেশার মানুষরা তাদের আইডি কার্ড নিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসে গিয়ে জেলেদের তালিকায় নাম লেখায়। এ কারণেই অন্য পেশার মানুষ জেলেদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা মৎস্য অফিসার সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল প্রাপ্ত জেলেদের তালিকার কপি এখনও কোন ইউপি চেয়ারম্যানগণ তার কাছে জমা দেননি। তবে নলচিড়া ও শরিকল ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি ৫ চেয়ারম্যান চাল বিতরণের সময় তাকে জানাননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান সাংবাদিকদের বলেন, তার কাছে কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড