• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধান কাটতে দেবদূতের মতো হাজির হল রাজৈর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষকরা

  মাদারীপুর প্রতিনিধি

০১ মে ২০২০, ১১:০৩
রাজৈর
কৃষকের ধান কেটে দিলেন শিক্ষকরা

অনেক ধার-দেনা করে এক একর জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। কৃষি শ্রমিক না পাওয়ায় নিজের পরিবারের সদস্যদের হাড় ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে ধানের পরিচর্যা করেছি। আজ জমির চারিদিকে সোনালী রংয়ের ঝিলিক। বাতাসে ধানের দোল খাওয়া দেখে সমস্ত কষ্টের দিনগুলি ভুলে গেছি। কিন্ত ধান পেকেছে। পাকাধান কেটে ঘরে তুলতে পারছি না। একদিকে আকাশে মেঘ। কখন বৃষ্টি নেমে আমার পরিবারের সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে। সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটে।

অনেক ঘোরা ঘুরি করে কোথাও ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছি না। পরিবারের সবার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কেননা এ জমির ধানই আমার পরিবারের সদস্যদের এক বছরের অন্ন যোগাবে। কি করি, কি করি এ ভেবেই কয়েক দিন পার হল। অবশেষে দেবদূতের মতো হাজির হল রাজৈর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষকরা। তারা এসে জমির সমস্ত ধান কেটে আমার ঘরে তুলে দিল। কথাগুলো রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম দক্ষিণ পাড়ার প্রান্তিক কৃষক সুবাস বালার।

স্থানীয় পর্যায় তথ্য নিয়ে জানা যায়, জেলার রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম দক্ষিণ পাড়ার কৃষক সুবাস বালা শ্রমিকের অভাবে তার জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছিলনা। ঠিক সে সময়ে উপজেলা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেয় সুবাস বালার জমির দান কেটে দিবে। বৃহস্পতিবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুল হকের নেতৃত্বে এক দল শিক্ষক কান্তে হাতে নেমে পড়ে ধান কাটতে। শুধু লোক দেখানো নয়, বাস্তবিক অর্থে সুবাস বালার এক একর জমির পাকা ধান কেটে মাথায় করে বাড়ি নিয়ে মাড়াই করে ঘরে তুলে দেয়।

ধান কাটার অগ্রভাগে থাকা রাজৈর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিন্দ্রনাথ বাড়ৈ’র জানান, দেশজুড়ে যখন লকডাউন চলছে এ অবস্থায় ফসল ঘরে তুলতে শ্রমিক সংকটে ভুগছেন কৃষকরা। এ অবস্থায় শিক্ষক সমাজ ঘরে বসে থাকতে পাওে না। তাই শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কৃষক সুবাস বালার ধান কেটে ঘরে তুলে দেই।

রাজৈর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় আলমদস্তার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হোসেন সিকদার বলেন, কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ, শেখ হাসিনার নির্দেশ' এই শ্লোগানকে সামনে রেখে কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিলো শিক্ষক সমাজ। কেননা আমাদের পেটের অন্ন যোগায় যে কৃষক আজ তাদের পাশে থাকা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কৃষকদের পাশে থেকে আমাদের এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

কৃষক সুবাস বালা জানান, স্যারেরা আজ আমার বড় উপকার করল। এ জমিতে সামান্য বৃষ্টি হলে ধান তলিয়ে যেত। ধান না কাটতে পারলে আমি পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে –অনাহারে দিন কাটানো লাগত। স্যারদের এই উপকার কখনো ভুলবার নয়। এ সময় অন্যান্য’র মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজৈর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলুল হক, আমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চৈতন্য কুমার বৈদ্য, মালেক মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীব কুমার বিশ্বাস সহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষক।

সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আমগ্রাম বিলের সুবাস বালার এক একর জমির পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দেয়ায় স্থানীয়রা শিক্ষকদের প্রশংসা করেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড