• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার মা

  সারাদেশ ডেস্ক

০১ মে ২০২০, ০৬:১৪
অধিকার
ছবি : প্রতীকী

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন চার সন্তানের জননী এক বিধবা নারী।

বুধবার (২৯ এপ্রিল) রাতে উপজেলার কদমতলা এলাকায় এই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) বিকালে পাঁচ ধর্ষকের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় মামলা করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার কুলতলীর অফেজউদ্দীনের ছেলে মহসীন হেসেন (৩০), রামচন্দ্রপুরের মুজিবর রহমানের ছেলে সফিকুল (২৪), মৃত আব্দুল দফাদারের ছেলে হান্নান (২৭), দক্ষিণ হাজীপুর দীঘির পাড় এলাকার আদম আলীর ছেলে সফিকুর রহমান বাবু (৩০) ও কাটাখালীর আব্দুস সাত্তার গাইনের ছেলে গোলাম রব্বানীর (২৩)।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, নির্যাতিতার লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে পাঁচ ধর্ষকের একজন স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আত্মীয় হওয়ায় নির্যাতিতা নারীর পরিবারের সঙ্গে আপোষরফার প্রাথমিক চেষ্টায় ব্যর্থ হলেও দরিদ্র ওই নারীর পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করছে।

নির্যাতনের শিকার নারী বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র দেখানোর কথা বলে ঘটক ও কুলতলী গ্রামের অফেজউদ্দীন গাজীর ছেলে মহসীন হোসেন আমাকে কদমতলায় নিয়ে যায়। পরে আমাকে আরও একজন ভালো পাত্রের অভিভাবকের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বুধবার বিকালে আমাকে একটি ভাড়াটিয়া মোটরসাইকেল চালক (বাবু) এর সহায়তায় কুলতলী গ্রামে নিয়ে যায় মহসীন।

তিনি আরও বলেন, যাওয়ার পথে সন্ধ্যা হলে এই সুযোগে একই এলাকার একটি চিংড়ি ঘেরের বাসায় আটকে রেখে চার সহযোগীসহ মহসীন আমাকে ধর্ষণ করে।

নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে উদ্ধার করে ঘের কর্মচারী আলমগীর হোসেন ও শুধাংসু মণ্ডল।

তারা জানান, রাতে পাহারা দেওয়ার সময়ে ঘেরের বাসা থেকে ওই নারীর চিৎকার শুনতে পান তারা। দ্রুত তারা ঘটনাস্থলে ছুঁটে গেলে সফিকুল, মহসীন, বাবু, গোলাম রব্বানী ও হান্নানসহ আরও দুইজনকে হেঁটে যেতে দেখেন। পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার নারীকে উদ্ধার করে রাতে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ নজরুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যান তারা।

গ্রাম পুলিশ নজরুল ইসলাম জানান, রাতে স্থানীয়রা ধর্ষণের শিকার ঐ নারীকে তার (গ্রাম পুলিশ) বাড়িতে পৌঁছে দেয়। পরে রাত গভীর হওয়াতে নিজের বাড়িতে রাখার পর দুপুরে শ্যামনগর থানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, ঘটনাটি জানাজানি হতেই ধর্ষক সফিকুল ইসলামের মামা রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল খালেক ৫০ হাজার টাকায় বিষয়টির মীমাংসা করতে চেষ্টা করেন।

ধর্ষণের শিকার ওই নারীর বিষয়ে রাতেই পুলিশকে অবহিত করেন মানবাধিকার কর্মী হাফিজুর রহমান নাইম।

তিনি জানান, ধর্ষণের শিকার নারীর কাছে বর্ণনা শুনে রাতেই স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে সত্যতা পান। পাঁচ ধর্ষকের অন্যতম সফিকুল ইসলামের নিকটাত্মীয় এক জনপ্রতিনিধি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ কারণে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এ ধর্ষণের ঘটনার তথ্য নিতে নুরনগর ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার পর তাদের পরিষদ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

হাফিজুর রহমান জানান, অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়াতে দরিদ্র ও সহায় সম্বলহীন ওই নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া এমন দুঃসহ ঘটনার বিচার পাওয়া নিয়ে শুরুতেই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মহসীন, গোলাম রব্বানী, বাবু ও হান্নান এবং সফিকুলসহ তাদের গ্রুপের ১৫-১৬ জন খুব দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। ইতোপূর্বে একাধিক ধর্ষণের ঘটনায় জড়ানো এই গ্রুপের দুই সদস্য এখনো মাদক ব্যবসায় কারাগারে রয়েছে। প্রায় দেড় বছর আগে এই গ্রুপের দুই সদস্য স্থানীয় হাজীপুর গ্রামের এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে খবরের শিরোনাম হয়। এছাড়া তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী কয়েক বছর আগে নুরনগর আশালতা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড