ভৈরব প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে যৌতুকের দাবীতে স্বামী, শ্বশুড় ও ননাইশের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে কুলিয়ারচর থানায় লিখিত অভিযোগ করার পর ওসি আব্দুল হাই তালুকদার নববধূ ও তার ভাইকে থানায় ডেকে নিয়ে আপোষ ও তালাকনামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, উপজেলার দোয়ারিয়া গ্রামের মো. ধনু মিয়ার ছেলে মো. আ. সালাম (২৮) গত ১৪ জানুয়ারি পার্শ্ববর্তী বাজিতপুর উপজেলার পশ্চিম পিরিজপুর গ্রামের মো. আব্দুর রাশিদের কন্যা মোছা. আয়েশা আক্তার (২০) কে রেজি. কাবিনমূলে বিবাহ করে। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে নানা কারণে-অকারণে অত্যাচার ও অবিচার করতে থাকে সালাম।
গত ৪ এপ্রিল সকাল ১০ টার দিকে আব্দুস সালাম তার স্ত্রীকে বলে, বাবার বাড়ি থেকে ৪ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য। বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দিতে অস্বীকার করলে স্বামী, শ্বশুর ও ননাইশ মিলে নববধূ আয়েশাকে নির্মম ভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে তাকে খুন করার চেষ্টা করে।
এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পরলে এলাকার শতাধিক মানুষ আব্দুস সালামের বাড়িতে ভিড় জমায়।
সংবাদ পেয়ে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই তালুকদারের নির্দেশে এসআই মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নববধূ আয়েশাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে নির্যাতিতার বড় ভাই মো. বিল্লাল মিয়া (২৯)কে থানায় ডেকে এনে আয়েশাকে চিকিৎসার জন্য কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।
আয়েশা আক্তার ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কুলিয়ারচর থানায় ৩ জনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগটি এফআইআর না করে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই তালুকদার উভয় পক্ষকে ২ দিন যাবত বেশ কয়েকবার থানায় ডেকে নিয়ে শালিসের মাধ্যমে আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করে।
অবশেষে রবিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নির্যাতিতা ও তার ভাইকে থানায় ডেকে নিয়ে রাত ৭ টার দিকে ওসি আব্দুল হাই তালুকদার ও স্থানীয় এক মাতব্বরের নেতৃত্বে থানার ওসির রুমে নববধূর ভাইয়ের হাতে ১ লক্ষ টাকা ধরিয়ে দিয়ে উছমানপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কাজী কবির আহমদ এর মাধ্যমে তাদের বাধ্য করে আপোষ ও তালাকনামায় স্বাক্ষর করতে।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হলে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অবশেষে রবিবার (৫ এপ্রিল) রাত ৮ টা ৩৫ মিনিটের সময় আয়েশার লিখিত অভিযোগটি আমলে নিয়ে এফআইআর করতে বাধ্য হয় ওসি। সংবাদ পেয়ে সোমবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে নির্যাতিতা নববধূর বাবার বাড়ি পশ্চিম পিরিজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই নববধূ মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরে কান্নাকাটি করছে। এক ফাঁকে কথা হলে নববধূ বলেন, পুলিশ তাদেরকে থানায় ডেকে নিয়ে আপোষনামা ও তালাকনামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। এ ছাড়া তিনি আরও বলেন, আমি ওসি স্যারকে বারবার বলেছি, আমাকে আমার স্বামীর বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন, না হয় মামলা রেকর্ড করুন। কিন্তু তিনি আমার কোন কথাই শুনেননি বরং আপোষ ও তালাকনামায় স্বাক্ষর নেন।
এ ব্যাপারে নববধূর ভাই মো. বিল্লাল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওসি স্যার আমাদের থানায় ডেকে নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে বলেন, এজাহার থেকে দুই জনের নাম বাদ দিয়ে মামলা রেকর্ড করানোর জন্য। এতে আমি রাজি না হওয়ায় আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করার ভয় দেখায়। এতে আমি ভয় পেয়ে আপোষ মীমাংসায় রাজি হই।
উছমানপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কাজী কবির আহমদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তালাক নামা রোজি. করতে স্বামী পক্ষ আমাকে থানায় ডেকে নেয়। উভয় পক্ষের মতামতে আমি তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়েছি।
এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উভয় পক্ষ মিলে আপোষ মীমাংসা করেছে। এতে আমার করার কি আছে।
মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে জানা যায়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড