ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে আলোচিত তাকমিন (২০) নামে এক যুবতী প্রেমিকাকে গভীর রাতে মোবাইলে ডেকে এনে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রেখে স্থানীয় মসজিদে আযান দিয়ে ফজরের নামাজে ইমামতি করা সেই প্রেমিক প্রধান আসামি মুয়াজ্জিন আশিকুল হক (২৩)কে থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের একটি কক্ষ থেকে গ্রেফতার করেছে গফরগাঁও থানা পুলিশ।
রোববার (২৯ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে গফরগাঁও থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে পৌর শহরের মহিলা কলেজ রোডের অধ্যক্ষ আখতার হোসেন কিন্ডার গার্টেন স্কুলের একটি কক্ষ থেকে প্রধান আসামি আশিকুল হককে গ্রেফতার করা হয়। প্রেমিক আশিকুল হক নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের আইনাল হকের ছেলে ও গফরগাঁও আঠারদানা বায়তুন নূর জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন এবং পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র।
গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী জানান, ‘গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশিকুল হক তার প্রেমিকা তাকমিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আর আশিকুলের সহযোগী পুলিশের হাতে গ্রেফতার মাহফুজ শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইমাম হোসেনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ নিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনের মধ্যে গত ৬ দিনে দুইজনকে গ্রেফতার করছে থানা পুলিশ।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও গফরগাঁও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গফরগাঁও উপজেলার পাড়াভরট গ্রামের আব্দুল মতিনের মেয়ে তাকমিনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুয়াজ্জিন আশিকুল হকের। প্রেমিক আশিকুল হক সোমবার (২৩ মার্চ) দিনগত রাত তিনটার দিকে তাকমিনকে মোবাইলে কল করে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে আসে। পরে কৌশলে সেখানে তাকমিনকে ধর্ষণ করে আশিকুল। এসময় প্রেমিকা তাহমিন বিয়ের কথা বললে তার প্রেমিক আশিকুল হক বন্ধুদের নিয়ে এ ঘটনা ঘটায়।
সেমতে পূর্ব পরিকল্পনা করে সেখানে আগে থেকেই উৎ পেতে ছিল আশিকুলের বন্ধু মাহফুজ ও একই মাদ্রাসার আরো একজনছাত্র। পরে মাহফুজ ও ওই যুবক মিলে তাকমিনের হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে ও প্রেমিক আশিকুল তার মাথার পাগড়ী দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।
আশিকুল, মাহফুজ ও ওই যুবক মিলে তাকমিনের লাশ টেনে, হিঁচড়ে মসজিদের লাশ একটি জামগাছের ডালে ওড়না দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে। কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দেয়ার সময় হলে মসজিদের মুয়াজ্জিন আশিকুল আজান দেয়। মুসল্লিরা মসজিদে আসলে ওইদিন আঠারদানা জামে মসজিদের ইমাম মোঃ মোজাম্মেল হক (৪৭) নিজে মসজিদে না আসায় তার অনুপস্থিতিতে ফজরের নামাজে ইমামতি করেন মুয়াজ্জিম আশিকুল হক। এ সময় মুসল্লিদের সাথে মাহফুজ, ও ওই যুবকও নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তাকমিনের লাশ একটি জামগাছের ডালের সঙ্গে বাধা অবস্থায় দেখতে পায়। এসময় লাশটি গাছের ডালের সাথে ওড়না দিয়ে গলা বাধা ছিল। নিহতের পরিধেয় বস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল এবং পা মাটিতে ছিল। লাশের পাশে একটি মোবাইলও পড়ে ছিল।
মুসল্লিরা ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক স্থানীয় যশরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েল জানায়। পরে চেয়ারম্যান রিয়েল গফরগাঁও থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মমেক মর্গে প্রেরণ করে।
এ ঘটনার পর ময়মনসিংহ সিআইডির ক্রাইমসিন প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্ব সিআইডির একটি বিশেষ টিম এবং গফরগাঁও থানার ওসি অনুকূল সরকারের নেতৃত্বে থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল মঙ্গলবার সারাদিন ঘিরে রাখে। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বিকেলে নিহত তাকমিনের বাবা আব্দুল মতিন বাদী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এদিকে এ ঘটনার পরও বুধবার (২৫ মার্চ) জোহর পর্যন্ত আশিকুল হক গফরগাঁও উপজেলার পাড়াভরট গ্রামে বায়তুন নূর জামে মসজিদে অবস্থান করে সকল ওয়াক্তের আজান দেওয়াসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন। কিন্তু জোহরের পর আশিকুল হক মসজিদ থেকে পালিয়ে পৌর শহরের মহিলা কলেজ রোডের অধ্যক্ষ আখতার হোসেন কিন্ডার গার্টেন স্কুলের একটি কক্ষে অবস্থান নেয়। আর পুলিশ এ ঘটনায় মূল আসামি আশিকুল হকে গ্রেফতার করতে গত ৫ দিন ধরে গফরগাঁওসহ ময়মনসিংহ জেলার বেশ কয়েকটি থানায় অভিযান চালায়। অবশেষে গফরগাঁও থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে পৌর শহরের মহিলা কলেজ রোডের অধ্যক্ষ আখতার হোসেন কিন্ডার গার্টেন স্কুলের একটি কক্ষ থেকে প্রধান আসামি আশিকুল হককে রোববার (২৯ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে গ্রেফতার করা হয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড