ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে প্রেমিকাকে গভীর রাতে মোবাইলে ডেকে এনে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রেখে স্থানীয় মসজিদে আযান দিয়ে ফজরের নামাজে ইমামতি করেন মুয়াজ্জিন প্রেমিক আশিকুল হক (২৩)। তাকে সহায়তাকারী বন্ধুরাও নিজেরা নামাজ পড়েন। এ ঘটনার তিনদিন পর মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে পুলিশ ওই যুবতী হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে আটক করেছে।
গত সোমবার (২৩ মার্চ) দিনগত শেষ রাতের দিকে গফরগাঁও উপজেলার যশরা ইউনিয়নের পাড়া ভরট গ্রামে ওই যুবতীকে ডেকে এনে ধর্ষণ করে হত্যা করে মুয়াজ্জিন ও তার বন্ধুরা। পরে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক)হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
নিহত প্রেমিকা এবং হত্যাকারী প্রেমিক মো. আশিকুল হক স্থানীয় আঠারদানা জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র। প্রেমিক আশিকুল হক নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের আইনাল হকের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত যুবতীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুয়াজ্জিন আশিকুল হকের। প্রেমিক আশিকুল হক সোমবার (২৩ মার্চ) দিনগত রাত তিনটার দিকে ওই যুবতীকে মোবাইলে কল করে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে আসে। পরে কৌশলে সেখানে তাকে ধর্ষণ করে আশিকুল।
আরও পড়ুন : জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও ধর্ষণ চেষ্টা
এ সময় সেখানে আগে থেকেই ওত পেতে ছিল আশিকুলের বন্ধু মাহফুজ ও একই মাদ্রাসার ছাত্র নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের সাইদুলের ছেলে আরিফ (১৮)। পরে মাহফুজ ও আরিফ যুবতীর হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে ও প্রেমিক আশিকুল তার মাথার পাগড়ী দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।
আশিকুল, মাহফুজ ও আরিফ মিলে যুবতীর লাশ টেনে, হিঁচড়ে মসজিদের একটি জামগাছের ডালে ওড়না দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে। কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দেয়ার সময় হলে মসজিদের মুয়াজ্জিন আশিকুল আজান দেয়। মুসল্লিরা মসজিদে আসলে ওইদিন আঠারদানা জামে মসজিদের ইমাম মো. মোজাম্মেল হক (৪৭) নিজে মসজিদে না আসায় তার অনুপস্থিতিতে ফজরের নামাজে ইমামতি করেন মোয়াজ্জেম আশিকুল হক।
এ সময় মুসল্লিদের সাথে মাহফুজ, আরিফও নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর যুবতীর লাশ একটি জামগাছের ডালের সঙ্গে বাধা অবস্থায় দেখতে পায়। এসময় লাশটি গাছের ডালের সাথে ওড়না দিয়ে গলা বাধা ছিল। নিহতের পরিধেয় বস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল এবং পা মাটিতে ছিল। লাশের পাশে একটি মোবাইলও পড়ে ছিল।
মুসল্লিরা ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক স্থানীয় যশরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েলকে জানায়। পরে চেয়ারম্যান রিয়েল গফরগাঁও থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মমেক মর্গে প্রেরণ করে।
এদিকে ঘটনার পর ময়মনসিংহ সিআইডির ক্রাইমসিন প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্ব সিআইডির একটি বিশেষ টিম এবং গফরগাঁও থানার ওসি অনুকূল সরকারের নেতৃত্বে থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল মঙ্গলবার সারাদিন ঘিরে রাখে। বিকেলে নিহত মেয়ের বাবা বাদী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
আরও পড়ুন : প্রেমের কারণে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকালে গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) অনুকূল সরকার ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আহসান হাবীবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহফুজকে আটক করে।
গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি। তবে বাকি জড়িতদের গ্রেফতারের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাবে না। পরে ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের বিস্তারিত বলা হবে বলেও জানান তিনি।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড