চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বিপাকে পড়েছে কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটাবাসী। কারণ একটাই, ১২ দিন আগে ভারতে মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া ৩৩ জনের একটি সফরকারী দল গ্রামে ফেরার পথে। যদিও নভেল করোনা ভাইরাসে তারা আক্রান্ত না হলেও রীতিমতো এলাকার সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন হতে দেখা গেছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ লেখালেখি করতে দেখা যায় আতঙ্কিতদের। তবে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন ও সিএমপি কর্ণফুলী থানা পুলিশ স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানান।
জানা যায়, প্রতিবারের মতো চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ৩২ থেকে ৩৩ জনের একটি সফরকারী দল হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী ও নেজাম উদ্দিন আউলিয়াসহ বিভিন্ন আউলিয়া কেরামের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভারতে যান।
সফরকারী দলের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে তারা ভারতের দিল্লি-কলকতা-বেনাপোল সীমান্ত পার হয়ে শ্যামলী বাসযোগে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছেন। তাদের তথ্যমতে, সফরকারী দলটি রবিবার (২২ মার্চ) ভোর সকালে কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটার পুরাতন ব্রিজঘাটে পৌঁছাবেন।
এ দিকে, শনিবার (২১ মার্চ) ভারতের পশ্চিম কলকতায় করোনা ভাইরাস সন্দেহে দুইজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভাইরাস আতঙ্কের জেরে সেখানকার সরকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছুটি ঘোষণা দেন। তাই এই মুহূর্তে সেখানকার পরিবেশও খুব খারাপ বলে জানা যায়।
যদিও কর্ণফুলী থেকে সফরে যাওয়া দলের মো. বেলাল উদ্দিন ও মো. বাহাদুর এর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে কথা হলে তারা জানান, কর্ণফুলী থেকে যারা ভারতে গিয়েছেন তারা বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় অ্যাম্বাসির অনুমতিক্রমেই ভিসা নিয়েই সেখানে মাজার জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। তারা এখন অলরেডি বাংলাদেশে। প্রতি বছরেই তারা সফরে যান। সফরকারী দলের সকলেই সুস্থ ও ভালো আছেন। তবে তারা আরও বলছেন, ভারতীয় পুলিশ প্রশাসন পর্যটকদের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও মাজার জিয়ারত করতে যাওয়ায় তাদের পুলিশ খুব সম্মান করেছেন।
ভারতীয় বর্ডার কিংবা বেনাপোল সীমান্তে কোনো মেডিকেল চেকআপ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তারা জানান, বর্ডারের পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। বেসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের সবার পাসপোর্টে সিল দিয়ে দেশে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছেন বলে জানান।
অন্য দিকে সফরকারী দলটি ভারত থেকে ফেরায় এলাকাবাসীর মতো তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনেরাও রীতিমতো ভীত এবং উদ্বিগ্ন বলে জানা যায়।
স্থানীয়দের দাবি, শুধু ভাইরাসের আতঙ্ক যাতে লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য তাদের সবাইকে ঘোরাফেরার ব্যাপারে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার। এমনকি একটা মেডিকেল টিম দ্বারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কোয়ারেন্টিনে রাখা দরকার।
জানতে চাইলে কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘ভারত সফর শেষে চরপাথরঘাটা অভিমুখে যাত্রা করা দলটির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা সবাই ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে রাজি হয়েছেন। সে বিষয়ে পুলিশ খুব সতর্ক রয়েছেন। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুলিশ অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। সাধারণ জনগণের আতঙ্কিত হবার কিছু নেয়।’
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নোমান হোসেন বলেন, ‘ভারত সফরে যাওয়া দলটি গ্রামে ফিরছেন এমন খবরে স্থানীয় পুলিশ ও চেয়ারম্যানদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এলাকায় পৌঁছলে তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।’
আরও পড়ুন : গাইবান্ধা উপনির্বাচন : হাত ধুয়ে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা
প্রসঙ্গত, ভারতজুড়ে আতঙ্ক করোনা ভাইরাস। ভারতের পাঞ্জাবের স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য মতে, সেখানে তালিকা মেলাতে গিয়ে দেখা গিয়েছে সদ্য বিদেশ থেকে ফেরা ১৬৭ জনকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। সন্দেহ করা হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্যে পুলিশের দুইটি বড় দলকে কাজে লাগানো হয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ২৯ জনের খোঁজ মিলেছে বাকিরা এখনো পলাতক।
পাসপোর্টে ভুল ঠিকানা বা টেলিফোন নম্বর থাকার কারণেই তাদের খোঁজ করা যায়নি। দল দুটি সক্রিয় রয়েছে এবং ওই ব্যক্তিদের খোঁজ চালাচ্ছে। খুব শীঘ্রই খুঁজে বের করা যাবে।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড