ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্বব্যাপী এর প্রাদুর্ভাবের পর দেশব্যাপীও ঝুঁকি বাড়তে থাকায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মাঝে আতঙ্কিত মানুষ নিত্যপণ্যের মজুদ করতে কেনাকাটার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এই সুযোগে দ্রব্যমূল্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে।
শুক্রবার (২০ মার্চ) ফরিদপুরের জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার বাজারেও ক্রেতাদের অধিক পণ্য কিনতে দেখা গেছে। সংকটকালীন মজুদ গড়ে তুলতেই তাদের এ প্রবণতা। বুধবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা হতে এ প্রবণতা শুরু হয়। আর বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি দেখে বাজারের এক ব্যবসায়ী মন্তব্য করেন, যেন চাঁদ রাত (ঈদের আগের রাত) শহরে।
ফরিদপুরের চকবাজার ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন জনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতে বাজারে নিত্য পণ্যের দোকানগুলোতে ঈদের আগের রাতের মতো ভিড় জমে যায়। মানুষ চাল, ডাল, আটা, চিনি, সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। মাছ, মাংসের দামও বেড়ে গেছে।
একই অবস্থা দেখা যায় শহরের হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজার, টেপাখোলা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারেও। কাঁচামালের দামও এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ প্রেক্ষিতে মাত্র এক রাতের ব্যবধানে শুক্রবার সকালে ৩০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ টাকা কেজি দরে।
বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি গড়ে ৫ টাকা দরে। বস্তা প্রতি ৩শ টাকা বেড়েছে। শুধু জেলা শহর নয়, উপজেলা পর্যায়েও একই দশা। নিত্যপণ্যের দামের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। মোবাইল ও কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্টস সারাতে এখন এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি দামে।
এ প্রেক্ষিতে ফরিদপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ জাকির হোসেন শহরে অভিযান পরিচালনা করে মেসার্স রামকৃষ্ণ ভান্ডারের বিমল সাহজাকে ১৫ হাজার টাকা, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের হাফিজুর রহমানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। চালের দাম বেশি নেওয়ায় তাদের এ জরিমানা করা হয়। নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক বজলুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযানের পরেও দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক হয়নি বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীদের মতামত হচ্ছে, ক্রেতাদের এমন ভিড় দেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম কিছুটা বেশি রাখছেন।
ফরিদপুরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলছেন, মানুষ আতঙ্কিত হয়ে এসব পণ্যের মজুদ করছে। এই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নেবে এটিই স্বাভাবিক। আর পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
বাজারে এসব নিত্যপণ্যের দামের পাশাপাশি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারেরও দাম বেড়েছে। এসব পণ্যের সংকট বিরাজ করায় ক্রেতারা উচ্চ মূল্যেই সেসব কিনছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি হয়নি। বাজার পরিদর্শনে কাউকে অনিয়ম বা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকতে দেখলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দিকে, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, শুক্রবার পর্যন্ত জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৫ শতাধিক বিদেশফেরতকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন : কুড়িগ্রামে হোম কোয়ারেন্টাইনে ৯৭ জন
এছাড়া নগরকান্দা উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকায় চরযশোরদী ইউনিয়নের শ্রীবরদী গ্রামের আজিজুল ইসলামকে (৪০) ১০ হাজার টাকা এবং ফুলসূতি ইউনিয়নের হিয়াবলদী গ্রামের মজিবর রহমানকে (৩৭) ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেতী এ আদালত পরিচালনা করেন।
ওডি/জেএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড