• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুন্সীগঞ্জে বন্ধ হয়নি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

২০ মার্চ ২০২০, ১২:৩০
মুন্সীগঞ্জ
ফসলি জমি থেকে মাটি উত্তোলন

মুন্সীগঞ্জ সদর ও টংগিবাড়ী উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা নদী থেকে খনন যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে এখনো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কোনোভাবেই বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। এতে ভাঙন আতঙ্কে জনবসতি ও ফসলি জমি। তবে স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, প্রশাসন জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় দিন দিন বালু উত্তোলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার শিলই ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম লিটন বেপারির ছোট ভাই ইসমাইল বেপারি ও চাচাতো ভাই শাহাদাৎ বেপারি বালু উত্তোলন করছে।

স্থানীয়রা জানায়, শিলই ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম লিটনের ছত্রছায়ায় ইসমাঈল বেপারি প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার মানুষও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না।

ইসমাঈল রাতের আঁধারে নদীর মাটি লুট করছে। পাশাপাশি ইসমাইল রজতরেখা নদী থেকে মাটি অবৈধভাবে কেটে ট্রলি (স্থানীয় যান) করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। অন্যদিকে শাহাদাৎ ড্রেজারের পাইপের মাধ্যমে উত্তোলিত বালু সরাসরি বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে।

এর ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের পূর্বরাখি ও টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় এলাকার নদী পাড়ের জনবসতি ও ফসলি জমি।

সম্প্রতি সরেজমিন পূর্বরাখি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ড্রেজারের মাধ্যমে নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। উত্তোলিত বালু পাইপের মাধ্যমে শিলই এলাকার কয়েকটি জমি ভরাট করা হচ্ছে। নদীটির দুপাশের পাড় ভেঙে পড়ছে।

এ সময় ড্রেজারের ওপরে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, খনন যন্ত্র শাহাদাৎ বেপারির। তার কথায় নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। এছাড়াও এ নদী দিয়ে ট্রলার যেতে পারছে না। ট্রলার চালকদের সুবিধার জন্য বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

উত্তোলন করা বালুর স্তূপ

শিলই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেন সরকার আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে বলছি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। উল্টো ভূমিদস্যুরা আমাদের হুমকি দিয়ে মাটি কেটে যাচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে একটি বাড়ি পেয়েছিলাম। বালু লুটের কারণে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। কবে এ বাড়িটিও ভেঙে যায়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, প্রতি বর্ষা মৌসুমে ইসমাইল বেপারি পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে রজতরেখার মুখে পকেট তৈরি করে বালু জমিয়ে রাখেন। ওই বালু বিক্রি করেন সারা বছর। এতে রজত রেখা নদীটি নাব্যতা হারিয়েছে। এছাড়াও রজতরেখা নদীর উৎপত্তিস্থল দিঘীরপাড় বাজারের পাশে পকেট তৈরি করেছে। সেখানে রাতের আঁধারে বালু ভরাট করেন। দিনের আলোতে দেদারসে বিক্রি করেন। তার ইশারায় গভীর রাতে অন্যের জমি থেকে মাটি কেটে চুরি করে নিচ্ছেন একটি চক্র। প্রতি ট্রলারের জন্য ইসমাঈল পায় ৫০০-১০০০ টাকা। ইসমাঈলের ভূমি দস্যুতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই নদীটি গত ৮-১০ বছর আগেও ছোট একটি খালের মতো ছিল। এখন প্রায় ৪শ ফুটের বেশি চওড়া। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন দেখা দেয়। সব শেষ গত বছর দিঘীরপাড় ও হাইয়ারপার এলাকার ২৫-৩০টি বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়।

বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইসমাইল বেপারি। তিনি জানান, সে নদী থেকে মাটি তুলেন না। এ বিষয়টি ভূমি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভালো করেই জানেন।

শাহাদাৎ বেপারি বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন নদীতে কার ড্রেজার চলছে আপনারাই খোঁজ নিয়ে দেখেন। এর আগে প্রশাসন আমার ড্রেজার ধ্বংস করলেও অদ্ভুত কারণে পাশে থাকা এক প্রভাবশালীর ড্রেজার কিছুই করেনি।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাউল সাবেরিন বলেন, গত মাসে বালু উত্তোলনের দায়ে শাহাদাতকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গত সোমবার অভিযানে গিয়ে ড্রেজার পাওয়া যায়নি। তবে ড্রেজারে পাইপ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহম্মেদ জানান, বছরখানেক আগে অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে ওই নদীতে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। অভিযান চালিয়ে ড্রেজার ও বিপুল পরিমাণের পাইপ জব্দ করি। পরে ওই ড্রেজার ও পাইপ আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেখানে বালু উত্তোলন কয়েক মাস বন্ধ ছিল। এরপরও সে কীভাবে বালু উত্তোলন করছে তা কঠোরভাবে দেখা হবে।

ওডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড