• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধানে ধারাবাহিক লোকসান

৩০ হাজার হেক্টর বোরো জমি পতিত

  সহিদুল ইসলাম সহিদ, কিশোরগঞ্জ

১৫ মার্চ ২০২০, ১১:৪৫
কিশোরগঞ্জ
হাজার হাজার হেক্টর জমি এখন অনাবাদি অবস্থায় পতিত হয়ে পড়ে রয়েছে

গত কয়েক বছর ধরে জমিতে ধান চাষ করে লোকসান আর লোকসান গুণছে হাওরের কৃষক। এবার ফ্রিতে দিলেও কেউ নিল না বোরো ধানের জমি। হাজার হাজার হেক্টর পতিত বোরো জমিতে এখন গরু ছাগল দৌড়াচ্ছে। যেন বোরো জমিতে চর জেগেছে। বুক চাপা কষ্ট নিয়ে এভাবেই কথা বলছিল নিকলী উপজেলার পূর্ব গ্রামের সবচেয়ে বড় জমিদার ছলিমুল হক সেলিম। তার মতো হাওরের অনেক জমিদারের হাজার হাজার হেক্টর জমি এখন অনাবাদি অবস্থায় পতিত হয়ে পড়ে রয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে এখানকার কৃষকরা দেখছে তিন/চার বছর ধরে ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং বোরো চাষে অব্যাহত লোকসান। ফলে বোরো আবাদ দিন দিন ছেড়ে দিচ্ছে এ অঞ্চলের হাজারো কৃষকরা।

কিশোরগঞ্জ জেলাকে বোরো ধানের জেলা বলা হতো। সারাদেশের বোরো উৎপাদনের সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদনের উৎস ছিল হাওরাঞ্চল। কারণ জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় বড় বড় হাওর রয়েছে। যেখানে হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। এসব এলাকার প্রধান ফসল হলো বোরো ধান। গত কয়েক বছর আগেও হাওরে মাঠের পর মাঠ জুড়ে ছিল সোনালী ফসল ধান আর ধান। আর এ বছরে যতদূর চোখ যায় অনাবাদি (পতিত) জমি চোখে পড়ে। যেন গরু, ছাগল চড়ানোর মাঠ। গত কয়েক বছরে আগাম বন্যা ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষক। গত বছর বাম্পার ফলনের পরও ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। আর এ লোকসানের কারণে হাজার হেক্টর জমি পতিত রয়েছে এ অঞ্চলে।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চলে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমি। যদিও সরকারি হিসাবের সঙ্গে একমত নন স্থানীয় কৃষকরা। তারা বলছেন, হাওরে অন্তত ২৮ থেকে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো চাষ করা হয়নি। যা সম্পূর্ণ অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে।

ইটনা উপজেলার পূর্ব গ্রামের জমিদার ও স্কুল শিক্ষক ইউসুফ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাওরে আমার একশ একর জমি রয়েছে। এ বছর এক একর জমিও কোনো বর্গাচাষি পত্তন নেয়নি। আমার সম্পূর্ণ জমি পতিত হয়ে পড়ে রয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, কৃষকরা এক একর জমিতে ধান চাষ করতে যে খরচ হয় ফসল বিক্রি করে তা ওঠে না। উল্টো তাদের লোকসান গুণতে হয়। তারা ঋণ করে চাষাবাদ করে, কিন্তু ধান পেয়েও ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। তাহলে কেন ধান চাষ করবে? সরকার যদি ধানের ন্যায্যমূল্য না দেয় তাহলে আগামী বছর হাওরের সকল জমিই পতিত থাকবে।

পার্শ্ববর্তী মধ্যগ্রামের জমিদার মোহাম্মদ আলী বলেন, এ বছর আমার পরিবারের খোঁড়াকের জন্য এক একর জমি করেছি। বাকি ২৩ একর জমিই পতিত পড়ে রয়েছে। সেধে দিলেও পানির দামেও কেউ জমি নেয়নি। তিনি বলেন, কৃষক প্রতিবছরই ধানের দাম না পেয়ে অনেক ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়েছে। তারা ধান চাষ করে লাভের মুখ দেখা দূরের কথা, ঋণও শোধ করতে পারেনি। অনেকেই ঋণ খেলাপি হয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। তাই খাওয়ার জন্য অল্প জমি চাষ করে বেশিরভাগ জমিই অনাবাদি রেখেছেন অনেকে।

মিঠামইন উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ কামাল বলেন, আমাদের ইউনিয়নের প্রায় ৫০টিরও অধিক পরিবার বোরো চাষ করে ঋণগ্রস্ত হয়ে দুই বছর ধরে এলাকা ছেড়ে ঢাকা গিয়ে কাজ করছে। এলাকায় কয়েকশ হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল আলম বলেন, এ জেলার অধিকাংশ উপজেলা হাওর বেষ্টিত। এখানকার কৃষকের বোরো ধানই একমাত্র প্রধান ফসল। এখানে প্রতিবছরই প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আসছে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে বিভিন্ন কারণে এ এলাকার কৃষকরা ধানের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। যদি তা পেত কৃষক ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত না। তারপরও কৃষকরা যাতে লাভবান হয় তার জন্য বিকল্প ফসল হিসেবে যেমন ভুট্টা, সরিষা, পাট ও সূর্যমুখী আবাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ওডি/আরবি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড