শাহারিয়ার রহমান রকি, ঝিনাইদহ
আর্থিক দৈন্যতা, স্বামীর নিষ্ঠুরতা ও দরিদ্রতাকে পেছনে ফেলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তবাপুর গ্রামের রোজিনা আক্তার। নেশাগ্রস্ত স্বামীর অত্যাচারে একমাত্র কন্যা তিষাকে নিয়ে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থেমে থাকেননি তিনি।
বর্তমানে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি, সেলাই মেশিনের কাজ ও মধু বিক্রি করে আয় করছেন মাসে অন্তত ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। তার বাবা, মৃত মল্লিক খাঁ আর মা মাহিরোন নেছা। মেয়ে তিষা বর্তমানে স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
সরেজমিনে মোস্তবাপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করা অবস্থায় মাত্র ১৪ বছর বয়সে দরিদ্রতার কারণে রোজিনা আক্তারকে যশোর জেলার মহাদেবপুর এলাকায় বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন পর তাদের কোল জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই নেশাগ্রস্ত স্বামী আর শাশুড়ির নিষ্ঠুরতা চলে ধারাবাহিকভাবে। তবুও সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সেখানে টিকে থাকতে চাইলে শেষ রক্ষা হয়নি তার।
এর কিছুদিন পর স্বামীর বাড়ি ছেড়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাবার বাড়িতে চলে আসেন সন্তানকে নিয়ে। কিন্তু মৃত বাবার অভাবের সংসারে ভাই আর মায়ের বোঝা হয়ে থাকতে চাননি তিনি। চেষ্টা শুরু করেন নিজে কিছু করে আর্থিকভাবে সচ্ছলতার মুখ দেখতে। সেই চিন্তা থেকে ২০১৫ সালে মাত্র একটি চাড়িতে কেঁচো দিয়ে শুরু করেন জীবন যুদ্ধের পথচলা।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এখন তার প্রায় শতাধিক চাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট রয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত সার ও কেঁচো বিক্রি করে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেন। সেই টাকা দিয়ে মাঠে প্রায় ৯ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন সবজি চাষ করে এখন ভালোই চলছে তার সংসার।
পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করে ও বিভিন্ন স্থান থেকে মধু সংগ্রহ করে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করছেন। পাশাপাশি মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন সেই টাকা দিয়ে, সহযোগিতা করছেন ভাইয়ের সংসারে, নিজেও ব্যাংকে জমাচ্ছেন টাকা।
সংগ্রামী সফল নারী রোজিনা আক্তার দৈনিক অধিকারকে জানান, জাপান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের প্রশিক্ষণশালা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট সারের উৎপাদন শুরু করি। স্থানীয় মাটির চাড়িগুলোর মধ্যে গোবর দিয়ে এর মধ্যে ছেড়ে দেন এক ধরনের কেঁচো। কেঁচোগুলো গোবর খেয়ে যে মল ত্যাগ করে সেটাই কোঁচো কম্পোস্ট সার। চাড়িগুলো বসতঘরের পাশের একটি চালা ঘর তৈরি করে বসানো হয়েছে। এরপর থেকে বাড়িতে এ সার তৈরি করে এলাকার কৃষকদের কাছে বিক্রি করছি।
আরও পড়ুন : সীমান্ত প্রেসক্লাব বেনাপোলের আইন বিষয়ক সম্পাদক জাহিরুল মিলন
তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে নিজের গরু না থাকায় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে গোবর কুড়িয়ে ও কিনে কম্পোস্ট সার তৈরি করতাম। সে সময় লাভ অনেক কম হত। বর্তমানে আমার দুইটি গরু থাকায় বাইরের গোবরের আর প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি কেজি সার ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছি। আর কেঁচো বিক্রি করছি কেজি এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ২শ টাকা। যেখান থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার সার ও কেঁচো বিক্রি করতে পারছি। এছাড়া বিভিন্ন সবজির আবাদ করছি। যা দিয়ে এখন ভালোভাবে আমার সংসার চলে।
বর্তমান সময়ে তিনি এলাকায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একাগ্রতা আর চেষ্টা-সততা থাকলে অবশ্যই শূন্য থেকেও স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড