• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভেঙে ফেলা ইটভাটা চলছে 

  শরীয়তপুর প্রতিনিধি

১৪ মার্চ ২০২০, ১১:০৯
শরীয়তপুর
ইটভাটা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

শরীয়তপুরে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রশাসন কর্তৃক ভেঙে দেওয়া ৮টি ইটভাটায় শুরু করেছে ইট পোড়ানোর কাজ।

এর আগে হাইকোর্টের আদেশে অবৈধ ৮টি ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় শরীয়তপুরের প্রশাসন। কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভেক্যু মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ভাটার অবকাঠামো। ফায়ার সার্ভিসের সাহায্যে পানি ছিটিয়ে নষ্ট করা হয় ভাটার সব ইট। কিন্তু কিছুদিন পার না হতেই আবার ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে ওইসব ভাটায়।

বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আটং এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা মেসার্স মদিনা ব্রিকসে গেল বছর ডিসেম্বর মাসে অভিযান চালায় প্রশাসন। পরিবেশের ছাড়পত্র আর জেলা প্রশাসনের লাইসেনস না থাকায় ভেক্যু মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় অবকাঠামো। জরিমানা করা হয় ২ লাখ টাকা। বন্ধ ঘোষণা করা হয় ইট তৈরি ও পোড়ানো। নেওয়া হয় মুচলেকাও। কিন্তু অভিযানের এক সপ্তাহ না পেরোতেই শুরু হয় ভাঙা অংশের মেরামত কাজ। এখন চলছে ইট তৈরি আর তা পোড়ানো হচ্ছে ভাটায়। প্রশাসনের কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই বীরদর্পে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মদিনা ব্রিকস।

মদিনা ব্রিকসের ম্যানেজার রুহুল আমীন শিকদার বলেন, ‘তারা কাগজপত্র চাইছে, আমরা মূলত দিতে পারিনি। না দিতে পারায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে আর ভেক্যুর মাধ্যমে ভাঙচুর করেছে। ভাঙা অংশ মেরামত করে এখন আবার চালু করেছি।’

এখন কীভাবে ভাটা চালাচ্ছেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি তো সবকিছু ডিল করি না। এ ব্যাপারে মালিকপক্ষই বলতে পারবেন।’

মদিনা ব্রিকস মালিক পিন্টু জানান, ‘কাগজপত্র এখনো হয়নি। ওইভাবেই চালাচ্ছি ইটভাটা। ভাটায় মাটি পাওয়া যায় না। এ বছর চালিয়ে বন্ধ করে দেব ইটভাটা। আর এই ব্যবসা করব না।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর ৫৮টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ১২টি ভাটার ছাড়পত্র নবায়ন নেই আর ১১টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম।

সদর উপজেলার মদিনা ব্রিকস ছাড়াও ডামুড্যা উপজেলার মেসার্স হাওলাদার ব্রিকস, গোসাইরহাট উপজেলার মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকস, নড়িয়া উপজেলার মেসার্স ঢালী ব্রিকস সদর উপজেলার যমুনা ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং এবং জাজিরা উপজেলার মেসার্স যমুনা ব্রিকস, মেসার্স কীর্তিনাশা বিক ফিল্ড লিমিটেড ও মেসার্স জে.আই. বি ব্রিকসে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে স্ব স্ব উপজেলা প্রশাসন।

ইট পোড়ানো আইন অনুযায়ী ওইসব ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছিল না। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলে সেখানে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সও দেওয়া হয় না। তাই ইটভাটাগুলোর এসব কাগজপত্র না থাকায় জরিমানা করা হয় এবং বন্ধ ঘোষণা করা হয় সবধরনের কার্যক্রম। তবে তালিকায় থাকা অনুমোদনহীন আরও ৩টি এবং ছাড়পত্র নবায়ন ছাড়া ১২টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেনি প্রশাসন।

কিন্তু আবারও ওই ৮টি ইটভাটায় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে শুরু করেছে কার্যক্রম। তৈরি হচ্ছে ইট। পোড়ানো হচ্ছে ভাটায়। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে চলছে সবধরনের কাজ। এসব জানা আছে প্রশাসনের। কোনো চাপের কারণে চলমান এই অভিযান বন্ধ রয়েছে আর দুঃসাহস দেখানো ওই ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই প্রশাসনের কাছে।

গোসাইরহাট উপজেলার মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকসের মালিক চৌধুরী মাহফুজুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত তারা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছেন। আমি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। তাই আর বন্ধ করিনি। ছাড়পত্র বা জেলা প্রশাসনের লাইসেনস পাওয়ার আশায় কার্যক্রম চালাচ্ছি।

পূর্ব ডামুড্যার মেসার্স হাওলাদার ব্রিকস ফিল্ডের ম্যানেজার আব্দুর রশিদ মাদবর বলেন, প্রশাসন অভিযান করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। ভেক্যু দিয়ে ভাটা ভেঙে দিয়েছিল। ভাটা চালাতে নিষেধ করেছেন। এখন সবার সঙ্গে মিলমিশ করেই আবার চালু করছি।

আরও পড়ুন : চুয়াডাঙ্গায় প্রাইভেট কারের চাপায় গবাদিপশুসহ নিহত ১

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের দৈনিক অধিকারকে বলেন, জেলার সকল অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ওই সব ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করেছে কি না আমার জানা নেই। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওডি/জেএস

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড