শরীফ শিকদার, কাপাসিয়া, গাজীপুর
প্রতি শুক্রবার মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে মসজিদ ও তার আশপাশ এলাকা। বাস-সিএনজি, মাইক্রো বাস ও রিকশাসহ শতাধিক যানবাহন ভিড় জমায়। কারও হাতে মুরগি, ছাগল বা নগদ টাকা। মানত পূরণের লক্ষ্যে মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষ।
মসজিদটি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা শহর থেকে ২০ কি. মি. উত্তরে টোক সুলতানপুর গ্রামে অবস্থিত প্রায় ছয়শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী সুলতানপুর দরগাপাড়া শাহী মসজিদের কথাই বলছি।
লোকমুখে প্রচলিত আছে, এটা মানুষের তৈরি কোনো মসজিদ নয়। আল্লাহর কুদরতে অলৌকিকভাবে মাটি ভেদ করে নিচ থেকে গড়ে উঠেছে। মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়ে বিভিন্ন ধরনের মানত করে। মানতকে কেন্দ্র করে অনেকে টাকা পয়সা, মুরগি, ছাগল দান করে মসজিদে। এই মসজিদে নামাজ পড়ে মানুষ খাস নিয়তে আল্লাহর কাছে যা চায় আল্লাহ তার মনের মকসুদ পূর্ণ করেন বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। সপ্তাহে একদিন অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে নামাজ পড়তে আসে। প্রতি শুক্রবার ১৫ থেকে ২০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে এই মসজিদে ।
মসজিদটি কবে নির্মাণ করা হয় তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে ধারণা করা হয় মুঘল আমলে এটি নির্মিত হয়। ঐতিহাসিক তথ্য মতে, ইসলাম প্রচারের জন্য এই এলাকায় ৩৬০ জন আউলিয়া এসেছিল। তার মধ্যে ১৩১তম আউলিয়া শাহ সুলতান। যার নামানুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয়।
সুলতান আকবরের শাসনামলে ঈশা খাঁ ও মানসিংহের যুদ্ধ সংগঠিতকালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে অনেকেই ধারণা করেন। সুরকি ও ইটের সংমিশ্রণে মসজিদের মূল স্ট্রাকচার নির্মিত হয়েছিল। যেখানে অস্পষ্টভাবে খোদাই করে লেখা আছে ১৩৪৬। পরবর্তীকালে ১৯৮৭ সালে মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রাচীন রূপ এখন আর নেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢাকা পড়ে গেছে প্রাচীন নিদর্শনের মূল গম্বুজটি। ঢাকা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মসজিদে আসে। মসজিদের পাশে রয়েছে গণকবর। যেখানে অসহায় মৃত মানুষদের কবর দেওয়া হয়। এছাড়াও সুলতানিয়া হাফিজিয়া এতিমখানা মাদরাসা নামে তাদের নিজস্ব একটি মাদরাসা রয়েছে। যেখানে বর্তমানে ১৫০ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ালেখা করছে। মসজিদের মূল স্ট্রাকচারের মধ্যে শতাধিক মানুষ নামাজ পড়তে পারলেও সম্প্রসারিত পুরো মসজিদে একসঙ্গে ১০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে।
চাঁদপুর গ্রামের কাউসার মাহমুদ বলেন, প্রায় প্রতি শুক্রবারে এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসি। এই মসজিদে নামাজ পড়ে অন্যরকম একটা আমেজ পাওয়া যায়। উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে। অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে এখানে।
মসজিদের মোতাওয়াল্লী নুরুল ইসলাম জানান, মসজিদটি ৬শ বছরের পুরনো। সপ্তাহে মসজিদ থেকে আয় হওয়া লক্ষাধিক টাকা মসজিদ সম্প্রসারণ, মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ভরণপোষণ, মিনার নির্মাণ, নির্মাণাধীন পাঁচতলায় কিতাব ভবনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী ইসলামি সম্মেলনের আয়োজন করা হয় এখানে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড