• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হবিগঞ্জে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা পোস্ট মাস্টারের

  হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

১০ মার্চ ২০২০, ০৯:১৪
হবিগঞ্জ শায়েস্তাগঞ্জ
টাকা আত্মসাতের চেষ্টা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

হবিগঞ্জে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন শায়েস্তাগঞ্জের সাব পোস্ট মাস্টার। নানা ছলচাতুরী করে তিনি উক্ত টাকা নিজের কাছে আটকে রাখেন। অবশেষে একমাস পর খবর পেয়ে উক্ত টাকা উদ্ধার করেন সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল। একই সঙ্গে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। টাকা আত্মসাতের ঘটনায় পোস্ট অফিস কর্মকর্তা, কর্মচারী ও গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ দিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন শায়েস্তাগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সাব পোস্ট মাস্টার পিযুষ সূত্রধর। তিনি বিভিন্ন কৌশলে ওই গ্রাহককে ম্যানেজ করার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. আব্দুল কাদির জানান, গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও একটি সাদা কাগজে স্লিপ দিয়ে তিনি নিজের কাছে ১০ লাখ টাকা রেখে দেন। পুনরায় সঞ্চয়পত্র করে দেওয়ার কথা বলে তিনি এ টাকা নিজের কাছে রাখেন। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। এরপর গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র না করে তিনি নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ প্রধান ডাকঘরে গিয়ে শায়েস্তাগঞ্জের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায় শায়েস্তাগঞ্জ থেকে কোনো সঞ্চয়পত্র আসেনি। পরবর্তীকালে সেখানে গেলে ভারপ্রাপ্ত সাব পোস্ট মাস্টার পিযুষ সূত্রধর বিষয়টি স্বীকার করেন।

আব্দুল কাদির আরও বলেন, গ্রাহকদের হয়রানি করবে এটি মেনে নেওয়া যায় না। এটি বিভাগের দুর্নাম হয়। তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।

গ্রাহক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব জানান, ৩ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র করে দেওয়ার কথা বলে টাকাগুলো তার কাছে রেখেছিলেন। কিন্তু একমাস পর অফিসার গিয়ে টাকাগুলো উদ্ধার করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শায়েস্তাগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সাব পোস্ট মাস্টার পিযুষ সূত্রধরের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বড়চর গ্রামের ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব শায়েস্তাগঞ্জ সাব পোস্ট অফিসে ‘তিন গ নম্বর ০৯৯৫২৮৯’ এবং ‘তিন গ নম্বর ০৯৯৫২৯০’ নম্বরে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করেন। ত্রৈমাসিক দুটি সঞ্চয়পত্রই ৩ বছর মেয়াদি করা হয়। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি উক্ত সঞ্চয়পত্র দুটি ভাঙেন। গ্রাহক সঞ্চয়পত্রগুলো ভারপ্রাপ্ত সাব পোস্ট মাস্টার পিযুষ সূত্রধরের নিকট জমা দেন। পরে তিনি টাকা প্রাপ্তির ৫ লাখ টাকা করে দুটি চূড়ান্ত রশিদে ওই গ্রাহকের স্বাক্ষর নেন। সাথে সাথে টাকা উত্তোলন করে তিনি পুনরায় ৩ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র করে দেওয়ার কথা বলে টাকাগুলো নিজের কাছে রেখে দেন। এর বিপরীতে গ্রাহককে একটি সাদা কাগজে ১০ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছে মর্মে স্লিপ দেন। যার আইনগত কোনো বৈধতা নেই।

এ সময় ওই গ্রাহককে বলে দেন প্রধান ডাকঘর থেকে বই এলে তার সঞ্চয়পত্র করা হবে। এরপর থেকে বেশ কয়েকদিন গ্রাহক সঞ্চয়পত্র হয়েছে কি না খবর নিতে গেলে তিনি নানা টালবাহানা শুরু করেন। বারবারই বলেন হবিগঞ্জ প্রধান ডাকঘরে বই নেই। এলেই তিনি সঞ্চয়পত্র করে দেবেন। একমাস পর বিষয়টি সন্দেহ হলে গত ৪ মার্চ গ্রাহক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব হবিগঞ্জ প্রধান ডাকঘরে বইয়ের সংকটের বিষয়ে খবর নিতে গেলেই বিপত্তি বাঁধে। প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার খবর দেন সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেলকে। তিনি গিয়ে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পান শায়েস্তাগঞ্জ থেকে গত দুই মাসে কোনো সঞ্চয়পত্র জমা হয়নি। উপরন্তু ওই গ্রাহকের টাকাগুলো একমাস আগেই উত্তোলন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : আখাউড়া বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি গ্রাহক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবকে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ সাব পোস্ট অফিসে যান। সেখানে গিয়ে তদন্ত করে টাকা আত্মসাতের চেষ্টার সত্যতা পান। জিজ্ঞাসাবাদকালে পিযুষ সূত্রধর বিষয়টি স্বীকারও করেন। শেষ পর্যন্ত রাতেই তিনি ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে অশ্রেণি খাতে জমা দেন। একই সঙ্গে সাব পোস্ট মাস্টার পিযুষ সূত্রধরকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এর আগে প্রায় ৩ বছর পূর্বে পিযুষ সূত্রধর হবিগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের ইলেকট্রনিক মানি অর্ডারের ৫১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। উক্ত ঘটনায় তার ৩ বছরের বর্ধিত বেতন স্থগিত করা হয়েছিল। এসব ঘটনায় গ্রাহক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ওডি/জেএস

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড