• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাথর ক্র্যাশিং কাজে নিয়োজিত হাজারো নারী শ্রমিকের জীবন যুদ্ধ

  এম মোবারক হোসাইন, পঞ্চগড়

০৯ মার্চ ২০২০, ২১:৪২
নারী শ্রমিক
পাথরের ক্র্যাশিংয়ের মতো কঠিন কাজে জড়িত হাজারো নারী শ্রমিক (ছবি : দৈনিক অধিকার)

জীবিকার তাগিদে টানাপোড়েনের সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন নারীরাও। ফলে পরিবারের চাহিদা মেটাতে উত্তরবঙ্গের জেলা নীলফামারী, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের হাজারো নারী আসেন তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায়। এরপর যোগ দেন পাথরের ক্র্যাশিংয়ের মতো কঠিন কাজে।

সেখানে কথা হয় পাথরের ক্র্যাশিংয়ের মতো কঠিন কাজ করতে আসা সংগ্রামী রশিদা বেগমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘পাথরের ক্র্যাশিং সাইটে আসলি (আসলে) অশান্তি, আবার বাড়ি থাকলিও (থাকলেও) অশান্তি। পাথরের সাইটে কাজ পাওয়া যায় না। মজুরি নিয়ে নানাজনের নানা কথা। নিজেগে (নিজেদের) খাওয়া, বাচ্চাগুলার পড়াশুনা খরচ কোত্থেকে আসবে? মাইনষির (মানুষের) বাড়িত কাজ নেই। তাই পাথরের কাইজ (কাজ) মিললে টাহা (টাকা) হয়।’

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এশিয়ান মহাসড়কের উভয় পাশে ভারত ও ভুটান থেকে আনা মালিকদের সাইটে বড়-ছোট পাথর মাথায় নিয়ে কাজ করতে রশিদা বেগম (৪০) গড়গড় করে কথাগুলো বলেন। সম্প্রতি তার সঙ্গে দেখা হয়। ধুলোবালি দিয়ে সারা শরীর একাকার। মুখও দেখে চেনা যায় না। কাজ করে চলে যাচ্ছেন নারী পুরুষ সকলেই, দম ফেলার সময় নেই। জানতে চাইলে তিনি প্রায় ফুঁসে ওঠেন। তিন সন্তান, স্বামী ও নিজে মোট পাঁচটি মানুষের খাবার জোগাড় করতে তাকে প্রতিদিন পাথরের কাজে নামতে হয়। আজকাল তেমন একটা শ্রমিকের চাহিদাও নেই।

একই এলাকার বাসিন্দা করিমন নেছাও পাথরের কাজ করছিলেন। সংবাদকর্মী জেনে বলেন ‘হামাল্লার (আমাদের) কথা লে হেনে (নিয়ে) আর কি হবে? লিখলে কি কাজকাম পাওয়া যাবে?’ স্বামী ছিলেন দিনমজুর। এলাকায় তেমন কোনো কাজ নেই। তাই অভাবের সংসারের তাগিদে পাথরের কাজে নেমে পড়েন তিনি।

শুধু রশিদা-করিমন নয়,পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকার হাজারো নারী শ্রমিক এভাবে পাথরের কাজে জীবিকা নির্বাহ করছে। আর মাঝেমধ্যে ভারত-ভুটানে পাথরের দাম বৃদ্ধি হলে পাথর আমদানি বন্ধ থাকলে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। আবার সমস্যা মিটলে আমদানি শুরু হয়। প্রায় প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজ করতে গিয়ে অনেকের শরীরে চর্মরোগ বাসা বেঁধেছে।

অধিকাংশ নারী শ্রমিক শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। এত কষ্ট করেও ন্যায্য মজুরি পায় না তারা। করিমন নেছা বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে মাত্র ৩০০ টাকা মজুরি পায়। কিন্তু তা পরিশ্রমের তুলনায় অনেক কম।

ডোমারের জোশদা রানী জানান, একসময় এলাকায় কৃষি কাজ পাওয়া যেত। বাড়ির উঠানে শাকসবজিও হতো। এখন আর কৃষির ভালো ফলন নেই। সংসারে তিন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের জন্য নিজ এলাকা ছেড়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে বাংলাবান্ধায় পাথরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

আরও পড়ুন : গাইবান্ধায় সড়ক দুর্ঘটনায় নারীর মৃত্যু

বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, ‘গরিব অসহায় মহিলারা বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলাবান্ধায় এসে কাজ করছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে পাথর ক্র্যাশিং মেশিনে কর্মরত রয়েছেন। আমরা সমিতি ও ব্যবসায়ীদের কথা বলে সন্মানজনক মজুরি দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।’

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড