• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘খালার হোটেল’ দিয়ে স্বাবলম্বী অসহায় দুই নারী 

  মো. জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর

০৮ মার্চ ২০২০, ১৭:৫৩
হোটেল
হোটেলে কাজ কাজ করছেন পারভিন ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

হোটেলের নাম ‘খালার হোটেল’। এ নামেই পরিচিত শরীয়তপুর কোর্ট বাজারে ছোট ভাতের হোটেলটি। খালা বলতে লুৎফা (৪০) ও তার ছোট বোন পারভিন (৩৫)। দুই বোন মিলে হোটেলটি পরিচালনা করছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) খালার হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, হোটেল ভর্তি মানুষ খাবার খাচ্ছে। তাদের যত্ন করে খাবার পরিবেশন করছেন পারভিন।

হোটেলের কাজ করতে করতে পারভিন বলেন, ছোট বেলায় বাবা মারা যায়। আমার কোনো ভাই নেই। মা তখন অসহায়। আমি তখন অনেক ছোট। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমাদের দুই বোনকে বড় করেছেন। এখনো আমার মা অনেক কষ্ট করে। আমার বড় বোনও ছোট বেলায় মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করেছে। আমার বোন একটু বড় হওয়ার পরই মা বিয়ে দিয়ে দেয়। এরপর দুটি সন্তান রেখে বোনের স্বামী মারা যায়। তখন অন্যের হোটেলে পানি টানার কাজ করত বোন। এরপর বোন লুৎফা বলে, মানুষের কাজ আর কত দিন করব। নিজে কিছু করে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে একটু দাঁড়াতে পারি। এরপরেই কোর্ট বাজার মোটরস্ট্যান্ড টিনের ছাপরা তুলে একটা ভাতের দোকান দেন বোন লুৎফা। এখন আমার বোনের সঙ্গে আমিও কষ্ট করতেছি।

বাড়ি থেকে ভাত ও তরকারি রান্না করে দোকানে নিয়ে আসেন লুৎফা খালা। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাকে গর্ভে রেখে বাবা মারা গেছে। ছোট বেলায় অন্যের বাড়িতে কাজ করেছি। একটু বড় হওয়ার পর মা আমায় বিয়ে দিয়ে দেয়। দুটি সন্তান হওয়ার পর স্বামী মারা যায়। স্বামী মারা গেছে প্রায় ২৫ বছর হলো। এরপর অন্যের দোকানে ৫ বছর কাজ করেছি। আমি প্রথম চালান (নগদ অর্থ) দিয়ে মানুষ দিয়ে কাজ করিয়েছি। তখন দেখি নিজের চালান খুঁজে পাই না। আগে ফুটপাতে দোকান করছি ১০ বছর। প্রশাসনের লোক দোকান ভেঙে দেয়। কিন্তু আমি ভাঙিনি। তখন আমি শাহজালাল বেপারী নামে এক দোকানের মালিকের সঙ্গে কথা বলি। তাকে বলি, আপনার দোকানে ভাতের হোটেল দেব। দোকান ছোট হওয়ায় বাড়ি থেকে রান্না করে এখানে এনে বিক্রি করব।

তখন কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা ঋণ করি। আর আশা সমিতি থেকে ১ লাখ টাকা লোন নিই। পরে ১ লাখ টাকা দোকানের জামানত দিয়ে দোকান ভাড়া নিই। প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে আমরা দুই বোন ১৪ বছর ধরে দোকান পরিচালনা করে আসছি। এখন আমি প্রতিদিন ১৭-১৮ কেজি চালের ভাত বিক্রি করি। আমার ছোট বোনের ২টি সন্তান এবং আমার দুটি সন্তান রয়েছে।

খালার হোটেলে খেতে আশা ছয়গাঁও গ্রামের এক রিকশাচালক বলেন, এখানে খেতে আসি। কারণ খাবারগুলো ঘর থেকে রান্না করে নিয়ে আসা হয়। একেবারে টাটকা। দামেও কম। ভাতও বেশি দেয়। তাই এখানে আসি।

এ বিষয়ে লুৎফা খালা বলেন, আমরা খাবারে সীমিত ব্যবসা করি। এই হোটেলে ডিম তরকারি দিয়ে ২৫ টাকায় খেতে পারে। মুরগি দিয়ে ৫০ টাকা, মাছ সাইজ অনুযায়ী ৬০-৭০ টাকায় খাবার খাওয়া যায়। এছাড়া এখানে এক বেলা খাবারের আয়োজন করা হয়।

লুৎফা খালা নিজের পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে জীবন সংগ্রামের একজন সফল নারী। ভাতের হোটেল দিয়ে দুটি মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট বোন পারভিন তার ৩ মেয়ে। বড় মেয়ে সুমা মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন কলেজে মাস্টার্স পরিক্ষার্থী। মেজ মেয়ে কুলসুম এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ছোট মেয়ে জান্নাতুল ৫ম শ্রেণিতে পড়ে।

আরও পড়ুন: কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করতে গিয়ে ধরা পড়ল চোর

খালার ছোট বোন পারভিনের চাওয়া জেলা প্রশাসক থেকে অনেকে সাহায্য পায়। আমাদের যদি কিছু সহযোগিতা করত। তাহলে একটা বড় দোকান নিতে পারতাম। আর এতে সন্তানদের জন্য কিছু করতে পারতাম।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড