• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সংগ্রামী নারী উদ্যোক্তা মেহেরপুরের জোনাকি বিশ্বাস

  শাকিল রেজা, মেহেরপুর

০৭ মার্চ ২০২০, ১৩:৪৭
মেহেরপুর
উদ্যোক্তা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

জোনাকি বিশ্বাস মেহেরপুরের একজন অদম্য সংগ্রামী সফল নারী উদ্যোক্তার নাম। যিনি সমাজের শত প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি স্বামী পরিত্যক্ত অনেক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও।

সমাজে সফল নারী উদ্যোক্তার পরিচয়ে পরিচিত এই নারী হয়ে উঠেছেন পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের আইডল। বাস্তব জীবনে নানা প্রতিকূলতায় বার বার জর্জরিত হলেও থেমে যাননি কখনো। পরিশ্রম, প্রচেষ্টা আর অদম্য সাহস তাকে আজ স্বনির্ভর নারীতে পরিণত করেছে। সংসার চালাতে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও এগিয়ে আসবে এই আশায় কখনো হাল ছাড়েননি তিনি। নিজ লক্ষ্যে অনড় থেকে লেগে ছিলেন বলেই আজ তিনি সফল।

বলছিলাম মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা পুরন্দরপুর (খাঁনপুর) গ্রামের মফিজুর রহমানের স্ত্রী জোনাকি বিশ্বাসের কথা।

আমাদের সমাজে নারীরা যেখানে সংসার ছাড়া কিছু করার চিন্তাই করতে পারে না। সেখানে তিনি সংসারের পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তা হয়ে সমাজে কিছু করে দেখানোর চিন্তা করেন।

১৯৮৯ সালে যশোর কেশোবপুর উপজেলায় জন্ম জোনাকি বিশ্বাসের। ১৮ বছর বয়সে ২০০৭ সালে মুজিবনগরে বিয়ে হয় তার।

বিয়ের পরই শেষ হয়ে যায় তার শিক্ষা জীবন। স্বামীর সংসারে আসার পর নতুন পরিবেশে খুব অল্প দিনেই মানিয়ে নেন জোনাকি বিশ্বাস। স্বামী মফিজুর রহমান একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে জোনাকি বিশ্বাসকে তার স্বামীর সাথে যশোরে থাকতে হতো। সেখানে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মেয়েদের কাছে হাতে তৈরি করা হস্তশিল্পের কাজ দেখে তার এই কাজের প্রতি আগ্রহ জাগে। সেই থেকে শুরু হয় তার উদ্যোগী হওয়ার চেষ্টা। সেই লক্ষ্যে যশোরের মেয়েদের কাছে মাঝে মাঝে বসে থেকে কাজ শিখে নেয়। তারপর থেকে সে ধীরে ধীরে কাজ করা শুরু করে।

স্বামীর আয়ের পাশাপাশি নিজেও কিছু করার চিন্তা করছিলেন জোনাকি বিশ্বাস। সেই থেকে সে শুরু করে দেয় তার হস্তশিল্পের কাজ। ২ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে কাজ শুরু করে জোনাকি বিশ্বাস। কিন্তু তার সেই শক্ত মনোবল তাকে হারতে দেয়নি। তার চেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রম আজ সফল হয়েছে। দোকান থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের সিট-কাপড় কিনে, তার ওপর দিয়ে হাতে করে নকশা আঁকিয়ে তৈরি করছে ওয়ান-পিস, টু-পিস, থ্রি-পিস, নকশী কাঁথা, বেডসিটসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক।

এছাড়া কয়েকবার উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত উদ্যোক্তা ট্রেনিংয়ে ট্রেইনার হিসেবে বিভিন্ন মহিলাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে নিজ বাসায় গড়ে তুলেছে ছোট হস্তশিল্পের প্রতিষ্ঠান। যার নাম দিয়েছে মাহী হস্তশিল্প।

জোনাকি বিশ্বাস দৈনিক অধিকারকে জানান, আমার জীবনে আজ যা হয়েছে তা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং পরিশ্রমের ফল। ২০১৪ সালের দিকে যশোরে যখন আমার স্বামীর চাকরির সুবাদে ছিলাম তখন সেখানকার কিছু মহিলাকে কাপড়ের ওপর হাতে তৈরি নকশা করতে দেখি। তারপর সেগুলো দেখে আমার কাছে খুবই ভালো লাগল। তখন ভাবলাম ওরা যদি এ রকম সুন্দর করে কাজ করতে পারে আমি কেন পারব না। আমিও তো একজন মহিলা। আর সেই থেকে আমার কাজ করার প্রতি আগ্রহ জাগল। চিন্তা করলাম এ রকম কিছু করে নারী সমাজের মুখ উজ্জ্বল করব। তারপর থেকে আমি তাদের কাছে মাঝে মাঝে সময় নিয়ে শিখে নিলাম কীভাবে নকশা করতে হয়। তাদের কাছ থেকে কাজ শিখে নিয়ে আমি মাত্র ২ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে ধীরে ধীরে কাজ করা শুরু করি। কাজের মধ্যে নতুন নকশা তৈরি করার জন্য ইউটিউবের সাহায্য নিতাম। তারপর স্বামী চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফার্মেসির দোকান দেওয়ায় আমাকেও সেখান থেকে বাসায় চলে আসতে হয়। বাসায় আসার পর আমার এ রকম উদ্যোগের কথা শুনে বাড়ির পাশের লোকজন হাসাহাসি করত। আমি তাদের কথায় কখনো কান দেইনি। নিজের মতো করে আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। আর সেই চেষ্টা আজ আমাকে সফল উদ্যোক্তা করে তুলেছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমার হাতের তৈরি করা বিভিন্ন পোশাক মেয়েরা ব্যবহার করছে। এখন আমি মাহী হস্তশিল্প নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি। এখান থেকে আমি বছরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করতে পারছি। এতে আমার সংসার চালাতে এবং স্বামীকে সহযোগিতা করতে পারি। বর্তমানে আমার এখান থেকে ৩০ জন মেয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তবে বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে বেশি পণ্য তৈরি করতে ভয় পাচ্ছি। ঠিকমতো বাজারজাতকরণ করতে পারলে আমার প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় করতে পারব।

মেহেরপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক শফিউল আযম বলেন, বাজারজাতকরণের বিষয়টা কীভাবে জোরদার করা যায় সে বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। আমাদের জেলা খুবই ছোট, এখানে সেরকম বড় কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তাই মেহেরপুর জেলার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ করতে একটু সমস্যা। ঢাকাতে অঙ্গনা নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে যার মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো খুব সহজেই বাজারজাতকরণ করতে পারবে।

ওডি/জেএস

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড