খাগড়াছড়িতে ৫ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

একই পরিবারের তিনজনই চালক ও শ্রমিক। কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালাতেন। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার (৩ মার্চ) খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার গাজিনগর এলাকার বাড়ির পাশের কাঁঠাল গাছ ক্রয় করে তা কাটাই ছিল তাদের অপরাধ। চার টুকরো কাঁঠাল গাছেই কাল হলো তাদের।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গাজিনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ দিন সকাল ক্রয়কৃত গাছ কেটে নেওয়ায় বাধা দেয় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। এ সময় তাদের সঙ্গে বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে বিজিবির এক সৈনিক এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে মুছা মিয়া ওরফে সাব মিয়া (৭৫) ও আলী আকবর (২৮) মারা যায়।

পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা আহম্মদ আলী (২৩) ও তার শ্বশুর মফিজুল ইসলামকে (৫৫) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত হয়। এ ঘটনায় বিজিবির গুলিতে আহত ৪০ বিজিবির সিপাহি শাওন নিহত হয়।

নিহতদের মধ্যে আলুটিলা বটতলী গ্রামের মুছা মিয়া ওরফে সাব মিয়া, তার ছেলে মো. আলী আকবর এবং মো. আহাম্মদ আলী। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে নিহত মফিজ মিয়া নিহত মুছা মিয়ার বেয়াই।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে বিজিবি সদস্য এলোপাতাড়ি গুলি করলে একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বৈদ্যুতিক তার টানার জন্য কয়েকটি গাছ কাটা হয়।

এ সময় একটি ট্রাক্টরে করে সাব মিয়া ও তার ছেলে আহাম্মদ আলী কয়েক টুকরা গাছ গাজিনগর বাজারের একটি কাঠের মিলে নিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধা দেয় বিজিবি। এক পর্যায়ে বিজিবির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে সাব মিয়া ও তার ছেলের। এতে বিজিবি সদস্যরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সাব মিয়া ও তার ছেলে মো. আকবর আলী।

এছাড়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন, স্থানীয় আহাম্মদ আলী, মফিজ মিয়া এবং মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে সেখানেই মারা যায় বিজিবি সদস্য শাওন ও আহাম্মদ আলী। এ দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় মো. মফিজ মিয়া।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. সাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিজিবি সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। সাধারণ মানুষ নিজেদের বাড়ির গাছ কাটতে গেলেও বিজিবি বাধা প্রদান করে।

মাটিরাঙ্গা থানার ওসি শামছুদ্দিন ভুঁইয়া সংঘর্ষে পাঁচজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় নিহত বিজিবি সদস্যসহ দুজনের মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। অন্য দুজনের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। তবে এ বিষয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ দিকে ঘটনার পর বিকাল ৩টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সারাহ উদ্দিনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতারা।

এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসময় তিনি সকলকে শান্ত থাকারও আহবান জানান।

আরও পড়ুন : ঠাকুরগাঁওয়ে অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের ৭ জন হাসপাতালে

এ ঘটনায় জড়িত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ওডি/এএসএল