ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
পুরাতন ঘরের মাটি কাটছিল শ্রমিকরা। হঠাৎ মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে এলো রূপকথার গুপ্তধন শত শত মুদ্রা। মাটি টানা পাওয়ার ট্রলির চাকার ঘর্ষণে বেরিয়ে আসা মহামূল্যবান এসব প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ মুদ্রা কুড়াতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে উপস্থিত সবাই। সংবাদ পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে সেখানে ছুটে আসে প্রতিবেশীরা। মাটির নিচে আরও এমন মুদ্রা আছে গুজবে মাটি খুঁড়তে থাকে সবাই। সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকে শত শত উৎসুক মানুষের ভিড়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের দে পাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘটনার পর কালীগঞ্জ থানার পুলিশ কয়েক দফায় সেখানে অভিযান চালিয়ে শতাধিক সিলভার কালারের বেশকিছু কয়েন উদ্ধার করে। এর মধ্যে ওই বাড়ির গৃহবধূ করুণা রাণী দের কাছ থেকে ২৬টি এবং পার্শ্ববর্তী বলরামপুর গ্রামের নয়ন হোসেনের কাছ থেকে ছয়টি উদ্ধার করা হয়।
মুদ্রা উদ্ধারের বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর পুলিশের পক্ষ থেকে ৪৩টি ভারতীয় মুদ্রা উদ্ধারের কথা গণমাধ্যম কর্মীদের জানানো হয়।
তবে, স্থানীয়রা বলছেন মাটি কাটার সময় শত শত মুদ্রা বেরিয়ে আসে। তাদের দাবি উদ্ধার হওয়া মুদ্রাগুলো সবই রৌপ্য মুদ্রা। তবে কত পরিমাণ পাওয়া গেছে তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসী জানিয়েছে পুলিশ তাদের কাছ থেকে অর্ধশত মুদ্রা নিয়ে গেছে আর বাকি মুদ্রা শ্রমিকরা আত্মসাৎ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলা পূর্বে জামাল ইউনিয়নের গ্রাম গোপালপুর। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বেগবতী নদী। দুইশত বছরের অধিক সময় ধরে এই গ্রামে বসবাস করছে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। ওই গ্রামের কৃষক সুনিল দে। তাদের বাড়িতে রয়েছে চার পুরুষ পূর্বের ২০০ বছরের একটি পুরাতন মাটির ঘর। ১৫ দিন আগে পুরাতন সেই ঘর ভেঙে মেঝের মাটি কেটে পান বরজে নিয়ে যাচ্ছিল। সোমবার মাটি কাটার সময় পাওয়ার ট্রলির চাকার সাথে হঠাৎ বেরিয়ে আসে শত শত মুদ্রা। যে সব মুদ্রায় গ্রেট ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়া ও রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের ছবি রয়েছে।
বাড়ির মালিক সুনিল দের ভাই সুদিপ কুমার দে জানায়, আমার দাদার বাবা মানে চার পুরুষ আগের তারুণ দে গোপালপুর গ্রামে এই মাটির ঘরটি তৈরি করেন। তখন থেকেই পর্যায়ক্রমে এই ঘরে আমরা বসবাস করে আসছি। সম্প্রতি ঘরটি ভেঙে সেই মাটি মাঠের পান বরজে নেওয়া হচ্ছিল। সে সময় মাটির নিচ থেকে রৌপ্য মুদ্রা বেরিয়ে আসে। এ সময় আমার ভাবি করুণা রাণী দে ২৬টি কয়েন কুড়িয়েছিল। যেগুলো সোমবার সন্ধ্যা রাতে সাদা পোশাকের পুলিশ এসে নিয়ে গেছে। পরে রাতে আরও দু-দফায় পুলিশ বাড়িতে এসে তল্লাশি করে। তবে তার ধারণা এসব কয়েন তাদের চার পুরুষ আগের তারুণ দে মাটির নিচে রেখে দিয়েছিল।
ঘটনাস্থল থেকে মুদ্রা উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দেওয়া কালীগঞ্জ থানার এএসআই সুজাত আলী জানান, সংবাদ পেয়ে সন্ধ্যা রাতে ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৪৩টি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। বাকি মুদ্রা স্থানীয়রা আত্মসাৎ করেছে। উদ্ধার হওয়া মুদ্রার মধ্যে ২২টিতে রাণীর ছবি ও ১৯টি ব্রিটেনের রাজার ছবি রয়েছে। উদ্ধার করা মুদ্রাগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরকে দিয়ে দেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা জানান, সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানার পর থানার ওসিকে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
ওডি/এমবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড