নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদী সদর উপজেলার নূরালাপুরে রাস্তা পাকাকরণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারির বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠে পাকাকরণ কাজে নিম্নমানের ইট ও বালির পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করেছে ঠিকাদার। আর এসব অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল চেয়েছেন এলাকাবাসী। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সংসদ সদস্যের পিএস মনিরের মালিকানাধীন।
এ বিষয় স্থানীয় ইউপি সদস্য হাকিম প্রধান বলেন, ইটভাটার বাতিল ইট দিয়ে কাজ করেছে ঠিকাদার। এসব ইট ব্যবহার না করে কাজ বন্ধ রাখার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করলেও তারা কথা শুনেনি। তারা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো ওই নিম্নমানের ইট দিয়েই কাজ চালিয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল দেখতে গেলে একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, এমপির পিএস মনিরের স্বেচ্ছাচারিতা ও দলীয় প্রভাবের কাছে এলাকাবাসী অসহায়।
তারা আরও বলেন, বিলপাড় থেকে গদাইরচর পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণের কাজ চলছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে রাস্তা নির্মাণের দায়িত্ব পায় নরসিংদী সদর- ১ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতীকের পিএস মনিরুজ্জামানের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দায়িত্ব পেয়ে রাস্তা নির্মাণে ভালো মানের ইটের পরিবর্তে এতই নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে, যা হাত দিয়ে একটু চাপ দিলেই ইট ভেঙে যায়। তাছাড়া রাস্তায় বালির পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। রাস্তা কার্পেটিংয়ের জন্য সদ্যনির্মিত কালভার্ট কাপেটিং বসানোর আগেই তা ভেঙে যায়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
ইটভাটার বাতিল ইট ( ছবি : দৈনিক অধিকার )
জোয়ারিয়া কান্দার চানমিয়া বলেন, উন্নয়নের নামে এখানে এতটাই দুর্বল ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছে যা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা পথচারীরা পায়ে হেঁটে গেলেই ইট ভেঙে যায়। এ ধরনের ইট দিয়ে কাজ করার চেয়ে মাটির রাস্তায় চলা অনেক ভালো। তাই দ্রুত নম্বরবিহীন ইট দিয়ে কাজ বন্ধ করে ভালোমানের ইট দিয়ে কাজ শুরু করাসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।
এলাকার ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, সংসদ সদস্যের পিএসসি মনিরুজ্জামানের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই রাস্তার কাজ পেয়ে নম্বরবিহীন ইট দিয়ে কাজ শুরু করে। তার একচ্ছত্র আধিপত্য ও দলীয় প্রভাবে কেউ ভয়ে বাধা দেওয়ার সাহস পায় না। স্থানীয় ইউপি সদস্য বাধা দিলেও কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সাব কন্ট্রাক্টর তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি নয় টাকা বর্গফুট মজুরিতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করি। মালামাল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে। তারা যে ধরনের সামগ্রী আমাকে সরবরাহ করেন সেই ধরনের সামগ্রী দিয়েই আমাকে কাজ করতে হয়। তবে রাস্তা তৈরিতে খুবই নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
আরও পড়ুন: প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে যুবদল নেতার ‘নিখোঁজ নাটক’
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন মনিরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নূরালাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম ফয়সাল নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হলে তারা নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে এবং এসব ইটের পরিবর্তে ভালো ইট ব্যবহার করবে বলে আমাকে কথা দেয়। কিন্তু পরে তারা বাতিল ইট দিয়েই কাজ করে। যা খুবই দুঃখজনক। এলাকাবাসীর মতো আমিও চাই ভালোমানের ইট দিয়ে মানসম্মতভাবে রাস্তার কার্পেটিং হোক। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কোনো হাত নেই, আমরা নিরুপায়। এ বিষয়ে টিআইও অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার জানান, টিআইওর সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
ওডি/এসএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড