মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে ওই ভবনে চলছে পাঠদান। যে কোনো সময় জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সেখানে শিশু থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিতে ২৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। ১৯২৮ সালে ছোট একটি টিনের ঘরের মাধ্যমে এ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৪ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে টিনের ঘরের জায়গায় তিন কক্ষের একটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সেটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ২০০৫ সালে পুরনো ভবনের পাশে দুই কক্ষের আরেকটি স্থাপনা তৈরি করা হয়। ২০১৬ সালে পুরনো স্থাপনা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারণে ঝুঁকি নিয়ে এখনো পাঠদান চলছে বিদ্যালয়টিতে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কামারখাড়া ইউনিয়নের বেশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে একটি বড় পুকুর আছে। পূর্ব পাশে পাকা সড়ক। বিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ডান পাশেই দুই কক্ষের নতুন ভবন। যেখানে একটি কক্ষে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান করা হয়।
জানা যায়, নতুন ভবনের অন্য কক্ষটি দুইভাগ করে সকালে একপাশে শিশু শ্রেণি এবং অন্যপাশে দাপ্তরিক কাজ করা হয়। এ ভবনের ঠিক বাম দিকে জরাজীর্ণ ভবনটি চোখে পড়ে। সে ভবনের দুই কক্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। গাদাগাদি করে বেঞ্চে বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। ভবনের দেয়াল ও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছাদের ভীমের লোহা বেরিয়ে আছে। কক্ষের জানালাগুলোও ভাঙা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্লাসে একটু দেরি করে এলে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। দুজনের বেঞ্চে কখনো গাদাগাদি করে চারজনকে বসতে হয়। দেয়াল ও ছাদ থেকে বিভিন্ন সময় পলেস্তারা খসে পড়ছে। মনে হয় এই বুঝি মাথার ওপর ছাদ ভেঙে পড়বে। প্রতিদিন এই আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে। তারা আরও জানায়, বিদ্যালয়টির খেলার মাঠ নেই। তাই পুকুর পাড় ও রাস্তায় খেলাধুলা করতে হয়।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারজানা ফেরদৌস বলেন, গত গ্রীষ্ম মৌসুমে দ্বিতীয় শ্রেণির বাচ্চাদের ক্লাস চলছিল। এ সময় একটি বৈদ্যুতিক পাখা চলা অবস্থায় ছাদ থেকে খসে পড়ে যায়। এতে জান্নাত নামে এক শিক্ষার্থী আহত হয়। শ্রেণি কক্ষ সংকটের জন্য পরিত্যক্ত ভবনে এখনো বাধ্য হয়ে ক্লাস নিচ্ছি। ভয়ে থাকি। কখন মাথার ওপর ছাদ ভেঙে পড়ে।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। বিদ্যালয়ের পাশে সড়ক ও পুকুর পাড়। সেখানে খেলতে গিয়ে বিভিন্ন সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর পর ভয়ে থাকতে হয়। কী জানি কী হয়ে যায়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়গুলো জানে। তাই খুব দ্রুত ভবন ও খেলার মাঠ নির্মাণ করা দরকার।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, নতুন ভবনের দুটি কক্ষ হওয়ায় পুরনো ভবনে ক্লাস করতে হচ্ছে। বারবার আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনেছি নতুন ভবন হবে। বিদ্যালয়ের পাশে একটি টিনের ঘর করা হয়েছে। যে পর্যন্ত নতুন ভবন না হয়, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে, সেখানে ক্লাস নেওয়া হবে। পুকুর ভরাটের বিষয়টি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : শরীয়তপুরে আগুনে নিঃস্ব ৩ পরিবার
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কামরখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হালদার বলেন, শ্রেণিকক্ষ–সংকটের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। শুনেছি এখানে নতুন ভবন পাস হয়েছে। খুব শীঘ্রই ভবনের কাজ হতে পারে। পুকুরের যতটুকু বিদ্যালয়ের অংশে আছে, তা ভরাট করা হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা আনজুমান আরা বেগম বলেন, পুরনো ভবন ভাঙার দরপত্র আহবান করা হয়েছে। পুরনো ভবনটি ভেঙে সেখানে কিছু দিনের মধ্যে নতুন ভবনের কাজ শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে ভবন নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ করা হয়েছে।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড