• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভুট্টা ও বিন্নি খই বিক্রি করে চলে সংসার

  নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:১১
নারায়ণগঞ্জ
ভুট্টা ও বিন্নি খই (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সনমান্দিতে কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ততা। যেন নাওয়া-খাওয়ারও সময় নেই। এখন ওই এলাকার প্রতি ঘরে ঘরে চলছে বিন্নি খই তৈরির ধুম। হাতে ভাজা খই বিক্রি করে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সারা বছরই এ খইয়ের চাহিদা থাকায় এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন খই বিক্রেতারা।

শীতের আগমনে গ্রামগঞ্জে শুরু হয় নানারকম মেলা, চলে বৈশাখ পর্যন্ত। এসব মেলার আকর্ষণ মুড়ি, ফুট খই, বিন্নি খই। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মুখরোচক খই হলো বিন্নি খই। এই খই গ্রামবাংলার লোকসমাজের চিরায়ত ঐতিহ্য মেলা বা পার্বণকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়। চিড়া, মুড়ি ও বিন্নি খই তৈরির প্রস্তুতিই জানান দেয় মেলা বা পার্বণের আগমনী বার্তা।

ভুট্টা ও বিন্নি খই বিক্রি করে অনেকেই এ পেশায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর পার করেছেন। এ পেশায় জড়িতদের বছরের বেশিরভাগ সময়ই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সময় কাটাতে হয়। তারপরও এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।

এলাকার কৃষকগণ কিছু বাড়তি আয়ের আশায় বিন্নি ধান চাষ করে থাকে। এ ধান অন্যান্য ধানের মতো এত ফলন হয় না। প্রতি বিঘায় ৭ থেকে ৮ মণ ধান হয়ে থাকে। ফলে এর দামও বেশি। যখন ৭ থেকে ৮শ টাকা মণ অন্যান্য ধান পাওয়া যায় তখন এ ধানের দাম থাকে ১৫ থেকে ১৬শ টাকা মণ। কখনো কখনো এর দাম ২৩ থেকে ২৫শ টাকা পর্যন্তও হয়ে থাকে। এই ধান থেকেই বিন্নি খই তৈরি করা হয়। খই তৈরির প্রক্রিয়াটি একটু কষ্টকর এবং সময় সাপেক্ষ।

জানা গেছে, উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের দৌলতপুর, জাঙ্গাল, গোপেরবাগ, বড়ইকান্দি, হযরতপুর, কাটাকালী, কাফাইকান্দি, পাঁচানিসহ ১১ গ্রামের ৩ শতাধিক পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে বিন্নি ও জয়নার ধানের খই বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। অল্প পুঁজি খাটিয়ে অধিক মুনাফা পাওয়ায় খই বিক্রেতারা এ পেশায় আকৃষ্ট হন। তাছাড়া সারা বছরই এ খইয়ের চাহিদা থাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রাখছেন। নগদ টাকা ও ভাঙাড়ির বিনিময়ে খই বিক্রি করে থাকেন। আবার ওই সব ভাঙাড়ি কেজিতে অন্যত্র বিক্রি করে দেন।

বাবুরকান্দী গ্রামের খই বিক্রেতা মোকুল জানান, ওই এলাকায় প্রথমে ফেরি করে বিন্নির খই বিক্রি শুরু করেন তার বাবা জাব্বার মিয়া। পরে আশপাশের কয়েকটি গ্রামে বিস্তার লাভ করে।

তিনি আরও বলেন, এ গ্রামের মুক্তার হোসেন এ পেশায় ২০ বছর পার করেছেন। খই তৈরি শেষে ৪ থেকে ৮ জনের দলে বিভক্ত হয়ে বেরিয়ে পড়েন চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান নেন বিভিন্ন এলাকায়। ফেরি করে নগদ টাকা ও ভাঙাড়ির বিনিময়ে খই বিক্রি করেন। খই বিক্রির সুবাদে তাদের ১০ থেকে ১৫ দিন বাড়ির বাইরে কাটাতে হয়।

তবে ফেরি করার সময় তাদের ছোট-বড় সমস্যায় পড়তে হয়। ভুট্টা ও বিন্নির খইয়ের চিনি ব্যবহার করে স্বাদ বৃদ্ধি করা হয়। দুই ধরনের খইয়ের প্রতিই ক্রেতাদের সমান চাহিদা রয়েছে। এই খই যদিও মুড়ির মতোই চাল থেকে ভাজা হয় কিন্তু দেখতে অনেকটা ফুট খইয়ের মতো। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট। রং ধবধবে সাদা। দেখতে আকর্ষণীয়, লোভনীয়। দুধসহ বা দুধ ছাড়াই গুড়, জিলাপি বা চিনি মিশিয়ে খেলে এর স্বাদের তুলনা করা কঠিন।

গ্রামের একজন পাইকারি ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি প্রতি মণ খই সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা দরে নিয়ে বিভিন্ন মেলায় সাড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেন। এ কাজ করে এলাকার প্রতিটি পরিবারে মেলা-পার্বণের সময় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন : বাঁশের সেতুই ভরসা তিন উপজেলার মানুষের

সনমান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ জানান, সরকার তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিলে এ ক্ষুদ্র ব্যবসারও প্রসার ঘটানো সম্ভব। এ ব্যাপারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

ওডি/জেএস

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড