• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুমি হত্যাকাণ্ডে ১১ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামিরা

  মিরসরাই প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৫৫
নিহত
নিহত নাহিদা আক্তার সুমি (ছবি : দৈনিক অধিকার)

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের আলোচিত নাহিদা আক্তার সুমি হত্যাকাণ্ড নিয়ে মূল ঘটনাকে আড়াল করে পুলিশের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার ১১ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশ নিহত সুমির পরিবার।

এ দিকে মেয়ে হারানোর শোকে মা পারভীন আক্তার পপি পাগলপ্রায়, মেয়ের শোকে প্রবাস থেকে ছুটে এসেছেন বাবা নুরুল আফসার। সুমির লাশ দাফনের পর পরিবার জানতে পারে এ ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে। যেখানে ঘটনার সঙ্গে মামলার বিবরণের কোনো মিল নেই। প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে জড়িত আসামিদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

নিহত সুমির পারিবারের সদস্যরা জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রবাসী নুরুল আফসারের মেয়ে নাহিদা আক্তার সুমিকে হত্যা করে স্বামী মীর হোসেন প্রকাশ ফারুকসহ তার পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে বাদী পক্ষের অভিযোগ থাকলেও শুধু স্বামী মীর হোসেন ফারুককে আসামি করে মামলা নেয় জোরারগঞ্জ পুলিশ। এ সময় পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বাকি ছয়জনকে বাদ দিয়ে সুমির ময়না তদন্তের কথা বলে মামলায় সুমির মা পারভীন আক্তার পপিকে বাদী করে স্বাক্ষর নিয়ে নেন।

এই ঘটনায় পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ সুমির পরিবার। সুমির পরিবারের দাবি এজাহারে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তার শ্বশুর আক্তার মিয়া, চাচাশ্বশুর সামছুদ্দিন মেম্বার, শাশুড়ি নুর খাতুন, গাড়ি চালক মুক্তার হোসেন, বাসার মালিক নিজাম উদ্দিন ও তার স্ত্রী কাজল জড়িত থাকলেও তাদের বাদ দিয়ে শুধু স্বামী মীর হোসেন ফারুককে মামলায় আসামি করে পুলিশ। এছাড়া সুমির বিরুদ্ধে গাড়ি চালক মুক্তার হোসেনের সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগ এনে পুলিশ একটি এজাহার লিখে তাতে পারভীন আক্তারের স্বাক্ষর নিয়ে মামলা দায়ের করেন। এতে দীর্ঘদিন ধরে স্বামী মীর হোসেন ফারুকের হাতে সুমি নির্যাতনের ঘটনাকে আড়াল করে হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মিরসরাই প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নিহত সুমির মা পারভীন আক্তার জানান, ২০১৩ সালের ২০ মে হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের চিনকীরহাট এলাকার আক্তার মিয়ার ছেলে মীর হোসেন প্রকাশের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ৫ পদের ফার্নিচার দিই। বিয়ের পর কিছুদিন তাদের সংসার সুখে কাটলেও বিগত চার বছর যাবত আরও যৌতুকের দাবিতে স্বামী মীর হোসেন ফারুক ও তার বাবা-মা আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করত। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময় তার স্বামীকে আমি প্রায় ছয় লাখ টাকা দিয়েছি। টাকা দেওয়ার পর কিছুদিন ভালো থাকলেও পরে আবার তারা নির্যাতন করত। নির্যাতনের কারণে একাধিকবার গ্রাম্য শালিসও হয়।

২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল জোরারগঞ্জ থানায় আমার মেয়ে বাদী হয়ে স্বামী মীর হোসেন ফারুক, শ্বশুর আক্তার মিয়া, শাশুড়ি নুর খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে থানায় বৈঠক হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভবিষ্যতে আর নির্যাতন করবে না মর্মে পুলিশ বিবাদীদের থেকে মুচলেকা নিয়ে সুখের সংসার করবে মর্মে আমার মেয়েকে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছুতেই ফারুককে নির্যাতনের মাত্রা কমেনি বরং দিনদিন তার নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে।

সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি পুনরায় এক লাখ টাকা আনার জন্য আমার মেয়েকে মারধর করে আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় সুমিকে আর মারধর করবে না এবং টাকা দাবি করবে না বলে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার সময় স্বামী মীর হোসেন ফারুক আমাকে ফোন করে বলে তোমার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে তার লাশ নিয়ে যাও। এটি শোনার পর আমি দ্রুত সময়ে তাদের ভাড়া বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে দেখি সুমিকে হত্যার পর বাসার সামনে ফারুকের প্রাইভেট কারের পেছনের সিটে সুমির লাশকে সোজা করে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পরবর্তীকালে গ্রামবাসীর সহায়তায় তার লাশ আমরা বাড়িতে নিয়ে যাই। খবর পেয়ে দুপুর ২টায় জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য লাশ নিয়ে যায়।

একই দিন রাত ৮টার সময় লাশের ময়না তদন্তের কথা বলে ওসি (তদন্ত) মাকসুদ আলম আমার কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। মেয়ের শোকে ওই সময় আমার কোনো সজ্ঞান ছিল না। পরবর্তীকালে গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারি আমার মেয়েকে খুনের ঘটনায় আমাকে বাদী করে জোরারগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ঘটনায় সুমির মা প্রশাসনের কাছে মেয়ে হত্যার উপযুক্ত বিচার চেয়ে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে পুনরায় মামলা নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুমির মা পারভীন আক্তার পপি, বাবা নুরুল আফসার, ফুফা মুসা মিয়া, খালা আছমা পারভীন আক্তার, খালু আবুল হাশেম মেম্বার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জোরারগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রায়হান উদ্দিন বলেন, মামলার এজাহারের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে শুধু মামলাটি তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা জানা যাবে।

আরও পড়ুন : মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে

জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাকসুদ আলম বলেন, মামলার বাদীকে সহায়তা করার জন্য থানায় এজাহার লেখা হয়েছিল। তাতে বাদীর বক্তব্যের বাইরে কোনো কিছু লেখা হয় নাই। তাছাড়া এজাহারটি অফিসার ইনচার্জ পর্যালোচনা করে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

জোরারগঞ্জ থানার ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বাদীর দেওয়া এজাহারের ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হয়েছে। এজাহারে পুলিশের নিজস্ব বক্তব্য সংযোজনের কোনো সুযোগ নেই। পুলিশের তদন্ত শেষে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন হবে।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড