এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা খাদ্য গুদামে ধারণ ক্ষমতা কম ও স্থান সংকটের কারণে সরকারিভাবে আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে ধীরগতি নেমে এসেছে। এতে করে কৃষরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গত এক মাস ধরে এমন পরিস্থিতির কারণে সরকারি খাদ্য গুদামে নানা সমস্যার মধ্যে ধান বিক্রি করছেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। খাদ্য গুদামে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ধান সংগ্রহ করায় রীতি মতো হিমশিম খাচ্ছেন গুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান, গুদামের ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় গাড়ির ওপর ও খাদ্য গুদামের আশেপাশে সড়কে ধানের বস্তা রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে কৃষকদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। সরকারি প্রণোদনা পেয়ে লাভবান হওয়ার পরিবর্তে তারা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ধানের দামে আর গাড়ি ভাড়ায় একাকার হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। গুদামের আশেপাশে খোলা আকাশের নিচে ধানের বস্তাগুলো স্তূপ করে রাখায় কারও কারও ধানের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ সড়কে বা গুদামের সামনে খোলা জায়গায় নানা কষ্টে ধানগুলো রোদে শুকিয়ে মান ভালো রাখার চেষ্টা করছেন।
কৃষকরা আরও বলেন, সরকারিভাবে ভর্তুকি দিয়ে আমন ধান সংগ্রহের খবরে উপজেলার সর্বত্র কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। বাজার মূল্য থেকে অতিরিক্ত মূল্যে ধান বিক্রিতে প্রতিযোগিতায় নামে প্রান্তিক কৃষকেরা। একজন কৃষক ২৬ টাকা কেজি ধরে মাত্র দুই টন ধান বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা থাকায় একেকটি পরিবারে অনেকে স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের নামেও কৃষি কার্ড বানিয়ে ধান বিক্রি করে যাচ্ছেন।
আবুল খায়ের নামে একজন কৃষক জানান, তিনি এবার ২০ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। ধানের উৎপাদনও বেশ ভালো হয়েছে। তিনি কৃষক হিসেবে মাত্র দুই টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। সেজন্য তিনি আগে থেকে তার স্ত্রী ও ছেলের নামে কৃষি কার্ড বানিয়ে রেখেছেন। তারপরও আরও প্রায় ৩০ টন ধান অতিরিক্ত রয়ে গেছে।
আবু সুফিয়ানসহ ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক জানান, ধান বিক্রি করতে এসে গত পাঁচদিন ধরে তারা গুদামের সামনে নির্ঘুম রাত যাপন করছেন। গাড়ির ওপর এবং গুদামের পাশে সড়কে ধান রেখে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তাই অনেক কৃষককে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া। তাদের দাবি এভাবে থাকলে ধানের দামের চেয়ে গাড়ি ভাড়া বেশি হয়ে যাবে। কেউ কেউ অতিরিক্ত লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।
খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম কৃষকদের দুর্ভোগ ও গুদামে জায়গা সংকটের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর থেকে ২ হাজার ৭শ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সোনাগাজী খাদ্য গুদামে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন ধান সংগ্রহ শুরু করা হয়। প্রথম দিকে কৃষকদের মধ্যে তেমন সাড়া না থাকলেও গত এক মাস যাবত ধান বিক্রি করতে কৃষকরা যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে নানা কষ্ট শিকার করে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান বিক্রি করে চলেছেন।
তিনি আরও বলেন, সোনাগাজীর তিনটি খাদ্য গুদামে ধান রাখার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার ৭৫০ টন। এর মধ্যে গুদামে জমা পড়ে রয়েছে কাবিখার কয়েকশ টন চাল। ধান ও চাল একই গুদামে গাদাগাদি করে রাখায় পোকার আক্রমণসহ ধানের ভ্যাপসা গরমে চালের গুণগত মান নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সোনাগাজীতে ১ হাজার ৪৪০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারিভাবে এই ধান সংগ্রহ অভিযান চলবে।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. খুরশিদ আলম বলেন, স্থান সংকটের কারণে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন : সেন্টমার্টিনে ট্রলার ডুবি : মৃতের সংখ্যার বেড়ে ২১
উপজেলা আমন ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব সোনাগাজী খাদ্য গুদামে স্থান সংকটের কারণে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ওডি/জেএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড