মামুন আহম্মেদ, বাগেরহাট
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে বাজার রক্ষা বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি প্রভাবশালীদের দখল প্রতিযোগিতায় মরতে বসেছে পানি সরবরাহের প্রধান উৎস রায়েন্দা খাল। এছাড়া বালু ভরাট করে স্থানীয় বাসিন্দারা বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পানি প্রবাহের উৎসগুলো। যার ফলে চারদিক অনেকটা পানি শূন্য হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বলেশ্বর নদীর ভাঙন থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বাড়ি ঘর ও ফসলসহ নানা সম্পদ রক্ষায় ১৯৬৫ সালে ৩৫/১ পোল্ডারের বাঁধ নির্মাণ করেন তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। পরবর্তীতে জেলার শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা খালটির উপজেলা প্রশাসন পাড়া সংলগ্ন এলাকায় ১৯৭০ দশকে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে উপজেলার কৃষকদের অসুবিধা দেখা দিলে তাদের সুবিধার জন্য জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে ওই সময় রায়েন্দা খালের বাঁধটি কেটে দেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ৯ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার শামসুল আলম তালুকদার। পরে একই স্থানে ১৯৮৯ সালে পুনরায় বাঁধ নির্মাণ করেন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান। যার ফলে পানির গতি কমে গিয়ে গত ৩০ বছরে খালে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় তা এখন মৃত্যুর পথে। সামান্য নদীর পানি ঢুকলেও তা খালের মাথা পর্যন্ত পৌঁছায় না।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৭ সালে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলে প্রকল্পের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা অবৈধ দখলদারদের নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের রক্ষার পাশাপাশি উপজেলার প্রধান খালটি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
পানি সমস্যার বিষয়ে রায়েন্দা এলাকার বাসিন্দা শাহিনুর বেগম বলেন, শুকনো মৌসুম আসলে পানি পাওয়া যায় না। যে যার মতো দখল করেছে। একটি মাত্র পুরোনো খাল ছিল তাও বাজার রক্ষার বাঁধের কাজ করতে গিয়ে বন্ধের পথে।
রায়েন্দা বাজার এর ব্যবসায়ী মো. তহিদুল বলেন, যারা রায়েন্দা খালের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে বড় বড় বিল্ডিং করেছেন, তাদের বহাল তবিয়তে রেখেই প্রকল্পের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা বাঁধ তৈরি করতে গিয়ে খালের অর্ধেক দখল করে ফেলেছেন। এক সময় এই খালে ঢাকা গামী লঞ্চ প্রবেশ করত। কিন্তু এখন ঘাটে একটি ট্রলার আসতে চাইলেও তা পারছে না। বর্তমানে পানির অভাবে বাসা বাড়ির কাজকর্ম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বাঁধে যে বালু দেওয়া হচ্ছে তা খালের তলদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। উভয় পার্শ্বের অবৈধ দখলবাজদের উচ্ছেদ করে পুরোনো এই খালটি খনন করা খুবই জরুরি বলে জানান তিনি।
শরণখোলা উপজেলার রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম খান রেজা বলেন, খালটি মারা গেলে উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের জন্য পানির প্রধান উৎস বন্ধ হবে। এতে শরণখোলার পরিবেশের বিপর্যয়সহ ফসল উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হবে।
এ ব্যাপারে রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান ও রায়েন্দা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, জনসাধারণের দাবির কারণে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে মূল খালের কোনো সমস্যা হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। এছাড়া খালের জমি কেউ দখল করেছেন কি না সেটা সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তা জানেন।
শরণখোলা উপজেলার (নবাগত) নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, খালের জমি কেউ দখল করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করা হবে।
আরও পড়ুন : যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক হলেন মৌলভীবাজারের উজ্জ্বল
বাঁধ নির্মাণ কারি প্রকল্পের টিম লিডার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবির কারণে বাজার রক্ষায় বাঁধ করা হচ্ছে এবং পানির প্রবাহ বাড়াতে ওই খালটি খনন করে দেওয়া হবে।
ওডি/জেএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড