ফরিদ মিয়া, টাঙ্গাইল
টমেটো চাষ করে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এক সময় দুস্থ এসব চাষিদের নুন আনতে পানতা ফুরাতো, এখন তাদের মুখ জুড়ে বইছে হাসির ফোয়ারা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সময় টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার চরাঞ্চলে চাষ হতো তামাকের। সেই চাষিরা এখন তামাক চাষ ছেরে টমেটো চাষে আত্মনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যার ফলে এ অঞ্চলে টমেটো চাষির সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ উপজেলায় উৎপাদিত টমেটো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তথ্যমতে এ বছর নাগরপুর উপজেলায় ৮৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। তবে ক্রমাগত শৈত্যপ্রবাহে টমেটো পাকতে দেরি হওয়ায় এবং অধিক লাভের আশায় গাছ থেকে কাঁচা টমেটো ছিঁড়ে মেডিসিন দিয়ে তা পাকিয়ে বাজারজাত করছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলার ৮৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। পরিমাপ এখন নির্ণয় না হলেও উৎপাদন ভালো। টমেটো সোলানেসি পরিবারের লাইকোপার্সিকগনের অন্তর্ভুক্ত কোমল ও রসালো সবজি। আমাদের দেশে টমেটোকে বিলাতী বেগুনও বলা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে। টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে বলে এটা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্নাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোস্টেটসহ ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। টমেটো একটি অর্থকরী ফসল। শুধু সবজি নয় সালাদ ও সস তৈরিতেও টমেটো ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের সফল চাষি মনসুর মিয়া শেখ, আতোয়ার হোসেন, মাসুম বিল্লাহ, জাহিদুল, জয়েদ আলীসহ রয়েছেন আরও অনেকে। টমেটো ছাড়াও ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুনসহ নানা রকমের শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ করছেন নাগরপুরের এ চাষিরা।
চাষি আতোয়ার হোসেন বলেন, আমি টমেটো চাষ করে এখন বেশ লাভবান। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ও পরামর্শে আমরা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছি। এর মধ্যে আমরা প্রতি বছর টমেটোর বাম্পার ফলন পেয়ে থাকি।
চাষি শহীদুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন বীজ কোম্পানির পরামর্শ ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায়, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি নিয়ে তারা জৈব সার ও সেক্সফোরমেন ট্র্যাপ ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন। বর্তমানে কয়েক একর জমিতে টমেটো ও সবজি চাষ করছেন। কিন্তু এবার ফলন ভালো হলেও শৈত্য প্রবাহের কারণে টমেটো পাকতে দেরী হচ্ছে। ফলে ভাল দাম পাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত। তাই চাষিদের লোকসান ঠেকাতে ও বেশী উৎপাদনের জন্য তার দাবী উপজেলায় একটি সবজি সংরক্ষণাগারের।
আরও কয়েকজন চাষি জানান, ফলনের প্রথম দিকে টমেটোর ভালো দাম পেলেও শেষের দিকে টমেটোর প্রতি কেজির দাম নামে ৫ থেকে ৭ টাকায়। যা আমাদের জন্য লাভজনক নয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে আমাদের মেডিসিন দিয়ে টমেটো পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। যদি টমেটো বা সবজি রাখার জন্য কোন সবজি সংরক্ষণাগার থাকতো তা হলে আমাদের টমেটো পঁচে নষ্ট হতো না। এর ফলে আমরা আরও ভালো দাম পেতাম।
এ প্রসঙ্গে নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, তামাক ছেরে আমরা তাদেরকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি। ঢাকা ও টাঙ্গাইলের নিরাপদ সবজি বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছে কৃষকদের উৎপাদিত মেডিসিন ছাড়া টমেটো সরবরাহের ব্যবস্থা করছি যাতে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায়।
আরও পড়ুন : নওগাঁয় কোকো ডাস্টে সবজি চারা উৎপাদন
এখন এলাকায় টমেটোর পাশাপাশি প্রচুর শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি কিভাবে মেডিসিন ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে টমেটো পাকানো যায়।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড