কাজী কামাল, নওগাঁ
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় কোকো ডাস্ট এবং প্লাস্টিক ট্রে ব্যবহার করে মাটি ছাড়াই উন্নত জাতের সবজির চারা উৎপাদন স্থানীয় চাষিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে সবজির চারা উৎপাদন স্থানীয় সবজি চাষিদের এক দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
মহাদেবপুর উপজেলা সদরের বালুকাপাড়া এলাকার ‘সরদার ফারমার্স হাব সবজি নার্সারির পরিচালক এস এম এমরান আলী মাটি ছাড়াই অভিনব পদ্ধতিতে সবজির চারা উৎপাদন করে সফল হয়েছেন।
মাটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কোকো ডাস্ট (নারিকেলের ছোবড়ার গুড়া)। এই পদ্ধতিতে নেট হাউজের ভেতরে চারা উৎপাদন করায় চারাগুলো মাটি ও বায়ুবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
মহাদেবপুর সদর ইউনিয়নের শালগ্রামের বাসিন্দা এস এম এমরান আলী। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও কৃষির উৎপাদন নিয়ে ভাবতেন সব সময়। কীভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের সুস্থ সবল সবজির চারা উৎপাদন করে সুলভ মূল্যে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এক সময় সেই পদ্ধতিও তিনি পেয়ে যান। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রযুক্তি সহায়তায় নানা পরিকল্পনা প্রয়োগ করেন কৃষিতে। এরপর শুরু করেন আধুনিক পদ্ধতিতে সবজির চারা উৎপাদন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে বর্তমানে তিনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোকো ডাস্ট ব্যবহার করে কেঁচো সারের সমন্বয়ে মাটি ছাড়াই সবজির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে প্লাস্টিক ‘ট্রেতে’। এ প্রযুক্তিতে দেখা যায় চারা পুরো শিকড় পেঁচিয়ে নেয়, এতে শিকড়ের কোনো ক্ষতি হয় না। এই চারা জমিতে রোপণের পরপরই খাদ্য গ্রহণ শুরু করে। আধুনিক এ পদ্ধতিতে তৈরি হাউজের চারপাশে নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ নিশ্চিত হয় এবং ক্ষতিকারক পোকামাকড় থেকে সবজির চারাগুলো রক্ষা পায়। তাপ নিয়ন্ত্রণ ও ঝড়বৃষ্টি থেকে চারাগুলো নিরাপদে রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ পলিথিন।
এস এম এমরান আলী বলেন, ‘মাটিতে চারা উৎপাদন করলে আবহাওয়ার কারণে চারা উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটত। গত বছরের নভেম্বর মাসে সিনজেনটা ফাউন্ডেশনের ‘ফারমার্স হাব’-এর সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে দুই শতক জমিতে সবজি নার্সারি গড়ে তুলি। আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে গ্রিন হাউজের আদলে তৈরি করি নেট হাউজ। এতে অল্প খরচে পেঁপে, করলা, চাল কুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও গোলাপ, গাদা, অর্কিড, অ্যান্ধরিয়াম, চন্দ্র মল্লিকা ফুলের চারাও উৎপাদন করা যায়।’
‘প্রচলিত পদ্ধতিতে একই জমিতে বারবার চারা উৎপাদন করায় জমিগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। উৎপাদিত চারা আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। এতে লোকসান গুণতে হয় নার্সারি মালিকদের। সবজি উৎপাদনেও ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। অন্যদিকে আধুনিক এ পদ্ধতিতে অল্প খরচে সুস্থ-সবল চারা উৎপাদন করা যায়।’
আরও পড়ুন : ফসল নয়, মাটি বিক্রি করে চলে সংসার
সরদার ফারমার্স হাব সবজি নার্সারিতে বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন কার্যক্রম অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আধুনিক এ প্রযুক্তি কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে সবজি চাষিরা দারুণভাবে লাভবান হবেন। অপর দিকে মাটির উর্বরতা হ্রাস এবং রোগ বালাইয়ের কারণে সবজি উৎপাদনে যে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে তা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড