ভৈরব প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ৩ মাস পর জামাল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রেমিকা আয়েশাকে বিয়ে করতে চাওয়ায় তাকে ফোনে ডেকে নিয়ে হত্যা করে আয়েশার বাকি ৩ প্রেমিক। এ ঘটনায় আয়েশাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ভৈরবপুর উত্তরপাড়া এলাকার মো. বাচ্চু মিয়ার মেয়ে আয়েশা বেগম আশা (২০), একই এলাকার ভাড়াটিয়া লালমোহন বিশ্বাসের ছেলে টিটু চন্দ্র বিশ্বাস ওরফে পবন (২৬), লক্ষ্মীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে মোক্তার হোসেন (২৮) ও একই এলাকার তারা মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া (৩২)। তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নিহত জামালের ব্যবহৃত মুঠোফোনের সূত্র ধরে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন ভৈরব থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীন।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক আশিকুর রহমানের কাছে প্রেমিকা আয়েশা বেগম আশা ও হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা টিটু চন্দ্র বিশ্বাস ওরফে পবন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানান ওসি মোহাম্মদ শাহীন। এছাড়াও মুক্তার হোসেন ও বাবুল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।
আদালতের জবানবন্দিতে আয়েশা বেগম আশা জানায়, টিটু চন্দ্রের সঙ্গে তার দুই বছর যাবত প্রেমের সম্পর্ক ছিল। টিটু ছিল মাদকাসক্ত। প্রেমের সম্পর্কের কারণে প্রায়ই তারা শারীরিক মেলামেশা করত। টিটুর মাধ্যমে মোক্তার ও বাবুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে এ দু’জনের সঙ্গেও সে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু টিটু তার উপার্জনের টাকা জোর করে নিয়ে যেত। এরই মধ্যে এক লোকের মাধ্যমে জামালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। জামাল তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। তার সঙ্গেও সে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু জামালের সঙ্গে মেলামেশা করা টিটু পছন্দ করত না। ঘটনার রাতে টিটুর কথায় সে জামালকে শহরের স্টেডিয়ামের কাছে মোবাইলে ডেকে আনে। এসময় মোক্তার ও বাবুল টিটুর সঙ্গে ছিল। জামাল ঘটনাস্থলে আসার পর তাকে বাসায় চলে যেতে বলে। পরদিন তার মৃত্যুর খবর পায় সে। জামালকে ডেকে আনলেও খুন করেনি বলে জানায় আয়েশা।
টিটু চন্দ্র বিশ্বাস ওরফে পবন তার জবানবন্দিতে বলেন, আমি আয়েশাকে ভালোবাসতাম। কিন্তু জামাল আয়েশাকে বিয়ে করতে চায়। তার কারণে আমার প্রেম শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই আয়েশাকে দিয়ে তাকে ঘটনার রাতে খবর দিয়ে ঘটনাস্থলে আনি। সে আসার পর আয়েশাকে বিদায় করে তিনজনে মিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করি। মোক্তার জামালের পুরুষাঙ্গ কেটে আলাদা করে। আমি ও বাবুল মিলে তাকে একাধিক ছুরিকাঘাত করলে সে ঘটনাস্থল আলুকান্দা এলাকায় মারা যায়। পরে তার লাশ কলাবাগানে রেখে আমরা পালিয়ে আসি। জামাল আমাদের পথের কাঁটা হয়ে গিয়েছিল, তাই তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছিলাম রাতের আঁধারে। তাকে হত্যার পরে ঘটনাটি আয়েশাকে জানিয়ে জামালের পুরুষাঙ্গটি তাকে দেখিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৯ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে ভৈরব উপজেলার বাউসমারা গ্রামের দিন মজুর জামাল মিয়া বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। জামাল তার স্ত্রীকে গানের আসরে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। পরদিন পরিবারের সদস্যরা শহরের আলুকান্দার একটি নির্জন বাগানে নিহত জামালের মরদেহ শনাক্ত করে। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠায়। পরে তার স্ত্রী বিলকিছ বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার একমাস পর জামালের চাচাতো ভাই ফরহাদকে সন্দেহজনক আসামী হিসেবে পুলিশ গ্রেফতার করে। কারণ ঘটনার দিন ফরহাদ তাকে মোটরসাইকেলে করে শহরে পৌঁছে দিয়ে ছিল। বর্তমানে ফরহাদ কারাগারে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব থানার ওসি (তদন্ত) বাহালুল খান বাহার জানান, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ৩ মাস পরেও হলে জামাল হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মূল অপরাধীদেরও ধরতে সক্ষম হয়েছি।
ওডি/এমএমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড