পাবনা প্রতিনিধি
পাবনার ফরিদপুরে সাথী ও বিথী নামের স্কুলছাত্রী দুই বোনের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে সাথী অষ্টম ও বিথী চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের শহীদ প্রামাণিকের মেয়ে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে সাথী নিজ বাড়িতে এবং বিথী ১ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
স্থানীয় চিকিৎসকরা এদের মৃত্যুর সঠিক কোনো কারণ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তবে খাদ্যে বিষক্রিয়া অথবা অজানা কোনো ভাইরাসে তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। এছাড়া একই উপসর্গ নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ওই গ্রামের তাসলিমা খাতুন ও রেশমা খাতুন নামে দুই গৃহবধূ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছেন।
নিহতদের পরিবার জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরে সাথী ও বিথী। এর কিছুক্ষণ পর তারা বমি করতে শুরু করে। বাড়ির সদস্যরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মনে করে দুই বোনকে প্রথমে গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করান। এদের মধ্যে বিথীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ৩১ জানুয়ারি রাতে সাথী বাড়িতে এবং ১ ফেব্রুয়ারি সকালে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে বিথী মারা যায় ।
স্থানীয়রা জানান, একই গ্রামের তাজ প্রামাণিকের স্ত্রী তসলিমা খাতুন (৪০) ও ফজলুল হকের স্ত্রী রেশমা খাতুন (৩২) নামের দুই গৃহবধূর মধ্যে একই উপসর্গ দেখা দেয়। অসুস্থ হওয়ার পরে তারাও একাধিকবার বমি করেন বলে তাদের স্বজনরা জানান। পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে প্রথমে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ওই দুই গৃহবধূকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা।
সাথী ও বিথীর মা সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘মেয়ে দুটি আমাকে রাতে ডাকলো বমি করছি মা ওঠো। উঠে দেখি বমি করে মেয়ে দুটো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বড় মেয়ে মারা গেছে বাড়িতে আর ছোট মেয়ে মারা গেছে হাসপাতালে। কি কারণে মারা গেলো আমি কিছুই বুঝতেছিনা।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ দুই গৃহবধূ জানান, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব ও ঘাড় অবশ হয়ে আসার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তারা। তবে দুই বোনের আকস্মিক মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক কোনো কারণ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, কি কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আতঙ্কে অনেকে অসুস্থ হচ্ছেন। সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আরএমও ডা. লুলু ওয়াল মারজান বলেন, আমরা ফরিদপুর হাসপাতাল থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় মেডিকেল টিমের সদস্য হিসেবে এসেছি। যে দুজন মারা গেছে তাদের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পরে হয়তো আমরা মৃত্যুর কারণ জানাতে পারবো। তাদের মৃত্যুতে আশেপাশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। আমরা অসুস্থদের চিকিৎসা এবং পরামর্শ দিয়েছি।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মুহাম্মদ আলী বলেন, একজন পেটের ব্যথা নিয়ে এসেছেন। তিনি এখন ভালো আছেন, খাওয়া দাওয়াও করছেন। চাইলে তিনি এখন বাড়ি চলে যেতে পারেন। অন্যজন হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন, সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা তার কিছু সমস্যা পেয়েছি। রিপোর্ট আসলে নিশ্চিত হয়ে রোগ সনাক্ত করতে পারবো।
বিষয়টি জানার পর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম ২ ফেব্রুয়ারি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহম্মদ আলী জানান, দুই বোনের মৃত্যু সংবাদ স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জেনেছি। তাদের কিভাবে মৃত্যু হয়েছে তার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন : মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন জানান, স্বজনরা তাদের জানিয়েছেন, ঝাল মুড়ি খাবার পরে দুই বোন অসুস্থ হয়ে পরে। ফুড পয়জনিং বা অজানা কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাথী-বিথীর মৃত্যু হতে পারে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড