মোহাম্মদ রোমান হাওলাদার, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার নয়ানগর ও শ্রীনগর উপজেলার সাতগাঁও এলাকায় গিয়ে চারদিকে তাকালে মনে হবে এ যেন হলুদের স্বর্গরাজ্য। আর সে হলুদের রাজ্যে এক ফুল থেকে আরেক ফুলে ঘুরে বেড়িয়ে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছির দল। মালিকের জন্যই তাদের এক ফুল থেকে আরেক ফুলে ছুটে চলা।
অগ্রহায়ণ থেকেই মধু সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়। আর এ সময়টাতে মৌচাষি আর সরিষা চাষিদের ব্যস্ততা একটু বেশি। সূর্য উঠতেই শুরু হয়, মধু সংগ্রহের ব্যস্ততা, চলে সূর্যের আলো নিভে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। মৌমাছিরা সারাদিন শুধু মালিককে খুশি করার জন্য ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততাই মৌচাষিদের পুঁজি। তেমনি মৌমাছিদের ব্যস্ততা দেখা মেলে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের নয়ানগর এলাকার মধুপল্লী ও শ্রীনগর উপজেলার বিরতারা ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সরিষা ক্ষেতের পাশেই সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌমাছির মধু সংগ্রহের বাক্স। মৌমাছিগুলো বাক্স থেকে নির্দিষ্ট পথে বের হয়ে ক্ষেতের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে ফিরে আসছে বাক্সে। বাক্সের ভেতরে থাকা বিশেষ ফ্রেমে মৌচাকে মধু জমা করে। প্রতিটি বাক্সে রয়েছে ৮ থেকে ১০টি ফ্রেম। সপ্তাহ পরপর ওই সব বাক্স থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
প্রতি বাক্সে প্রায় ৪০-৫০ হাজার মৌমাছি আর একটি মাত্র রানী মৌমাছি থাকে। ‘মতিয়ান সন্স’ মধু কোম্পানির মো. শহীদুল ইসলাম বর্তমানে ৬০টি মৌমাছির কলনি তথা বাক্স নিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতগাঁও গ্রামের সরিষা ক্ষেতের কাছের আরেকটি জমিতে।
মৌ চাষি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রধান ব্যবসা মধু চাষ। আমরা সারাবছরই মৌমাছি পালি। ছয় মাস এদের দিয়ে আমরা আয় করি, আর ছয় মাস এদের পেছনে ব্যয় করতে হয়। ছয় মাসে মৌমাছির পেছনে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা খরচ হয়। আর ১০-১৫ লাখ টাকা ব্যবসা হয়। বর্তমানে আমাদের এখানে ৬ লাখ টাকার চালান আছে।’
তিনি বলেন, ‘মৌমাছি চাষ এবং মধু চাষ আমরা বাব-দাদার আমল থেকে করে আসছি। সেখান থেকেই আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখান অনেক সময় কৃষি অফিসাররা এসে আমাদের মৌচাষে ভাল পরামর্শ দেয়। মৌমাছির অনেক রকমের রোগ আছে। এতে করে মৌমাছি মারা যায়। কৃষি অফিসাররা যদি আমাদের এ বিষয়ে বিশেষ কোনো পরামর্শ দিতেন, যাতে মৌমাছিগুলো না মরে। রোগ থেকে যাতে মৌমাছিগুলো আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারি। তাহলে আমাদের দিক থেকে অনেকটাই ভালো হতো।
আরও পড়ুন : সোনারগাঁয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বোরো ধানের শুকনো বীজতলা
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, মৌমাছির এই চাষ শুধু মৌ চাষিকেই স্বাবলম্বী করছে না বরং দেশের শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি এক ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে অন্য ফুলে গিয়ে বসছে। এতে মৌমাছির পায়ে পায়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে পরাগায়ন হচ্ছে। এতে ফসলের উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এক দিকে ফলন বৃদ্ধি আবার সঙ্গে বাড়তি লাভ মধু।
ওডি/এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড