• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সোনারগাঁয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বোরো ধানের শুকনো বীজতলা

  নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁ

৩১ জানুয়ারি ২০২০, ২১:০৪
শুকনো বীজতলা তৈরি করছেন কৃষকরা
শুকনো বীজতলা তৈরি করছেন কৃষকরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধানের চারা উৎপাদন। এই পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদনে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও বীজের অঙ্কুরোদগমের হার বাড়ছে এবং চারাও সুস্থ থাকছে। সেই সঙ্গে শুকনো বীজতলার চারায় ফলন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

ভালো মানের চারা উৎপাদন এবং খরচ কম হওয়ায় এ পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদনে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। ধান চাষে কৃষকদের লাভবান করতে এ পদ্ধতি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা।

সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মছলন্দপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করায় বোরো বীজ অঙ্কুরোদগমের হার কম হচ্ছে, চারাও ভালো হচ্ছে না। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে শুকনো বীজতলা পদ্ধতি অবলম্বন করে বেশ ভালো ফল পাচ্ছেন তারা। সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে সময় লাগতো এক থেকে দুই মাস। আর এখন শুকনো পদ্ধতিতে সময় লাগে মাত্র ২৫দিন। আগে এক বিঘা জন্য বীজতলা তৈরি করতে সময় লাগতো দুই থেকে তিন ঘণ্টা আর এখন এই শুকনো পদ্ধতিতে বীজ তলা সময় লাগে মাত্র আধা ঘণ্টা।

স্বল্প সময়ে ধানের সুস্থ্ ও সবল চারা উৎপাদনে এবং কুয়াশার কবল থেকে বাঁচাতে ভেজা (সেচ দেওয়া) বীজতলার চেয়ে শুকনো বীজতলা বেশি উপযোগী। এতে ফলন ভালো পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানান, সনাতন পদ্ধতিতে বিঘা প্রতি ধান পেতাম ১৪ থেকে ১৫ মণ আর এখন শুকনো পদ্ধতিতে ধান পেয়ে থাকি ২০ থেকে ২৫ মণ।

শুকনো বীজতলা তৈরি পদ্ধতি নিয়ে কৃষক হাসান বলেন, ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম কৃষি অফিসের পরামর্শে এক ব্যাগ বীজ থেকে পাঁচ কেজি করে সনাতন ও শুকনো বীজতলা পরীক্ষামূলক আলাদা আলাদাভাবে করি। তাতে শুকনো বীজতলায় ব্যাপক সফলতা পাওয়ার পর আস্তে আস্তে এই বীজতলার পরিধি বৃদ্ধি করতে থাকি।

তিনি বলেন, এ বছর সোনারগাঁ (এনএটিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে আমার নিজস্ব জমিতে আমিসহ এলাকার পাঁচজন সদস্য এক সঙ্গে শুকনো বীজতলা তৈরি করেছি। আমরা এবার জমিতে বেড তৈরি করে শুকনো মাটিতে বীজ বপন করেছি। এরপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, যাতে ঠান্ডা বা কুয়াশা থেকে বীজ রক্ষা পায়। বাইরের পরিবেশের চেয়ে পলিথিনের নিচে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকায় কম সময়ের মধ্যে বেশি পরিমাণ বীজের অঙ্কুরোদগম হয় এবং দ্রুত চারা বড় হয়।

সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কৃষি উপসহকারী মুহাম্মদ মোশারফ হোসাইন ভূইয়া বলেন, ‘প্রথম বছর আমাদের পরামর্শে মাত্র পাঁচ কেজি ধান বীজ দিয়ে শুকনো বীজতলা তৈরি করেন কৃষক আবুল কাসেম। ফলাফল দেখে নিজেদের উদ্যোগেই চার বছর ধরে মছলন্দপুর এলাকায় ধীরে ধীরে শুকনো বীজতলার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা।

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিজ উদ্যোগে ২০১৪ সাল থেকে শুকনো বীজতলার যাত্রা শুরু হয়। এ বছর ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্ট (এনএটিপি) ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় শুকনো বীজতলার মাধ্যমে প্রদর্শনী মাঠ তৈরি করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সকল খরচ (এনএটিপি) বহন করবে।

আরও পড়ুন : আড়াই মাসেও চাল পায়নি বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্তরা

তিনি জানান, শুকনো বীজতলার চারা ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে রোপণ করা সম্ভব হয়। আর সনাতন পদ্ধতিতে ৪০ থেকে ৫০ দিনের পর রোপণের উপযোগী হয়। বিশেষ করে শুকনো বীজতলার চারা উঠাতে গেলে গুচ্ছ শিকড়ের কোনো ক্ষতি হয় না, ফলে রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই ভালো ফল দেখা যায়। অন্যদিকে সনাতন পদ্ধতির বীজতলার চারা উঠাতে গেলে গুচ্ছ শিকড় ছিড়ে যায় ফলে রোপণের পর গুচ্ছ শিকড় গজাতে অনেক সময় লাগে।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড