আলফাডাঙ্গা প্রতিনিধি,ফরিদপুর
দুর্নীতি, অনিয়ম ও প্রবীণদের নিয়ে সম্মানহানীকর মন্তব্য করার অভিযোগে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইনামুল হাসানের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে স্থানীয়রা। প্রতিবাদে ফুঁসছে স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ সাধারণ মানুষ। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিতে বিক্ষোভ এবং ঝাড়ু মিছিল করেছে তারা। উঠেছে অপসারণের দাবিও।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে গোপালপুর বাজার এলাকায় এক ঝাড়ু মিছিল বের করে স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ সাধারণ মানুষ। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা চেয়ারম্যানের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে অপসারণ এবং শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। মিছিলটি বাজারের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল ইসলাম লিটন বলেন, 'দিনকে দিন ইনামুল হাসান গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানাচ্ছে। গরিব অসহায় মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত ঘরের জন্য মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। দুস্থদের জন্য ভাতার কার্ড বিতরণেও টাকা নিচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে ঘাটের ইজারার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। অথচ এই চেয়ারম্যান এসব টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের পকেটে ভরছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আর একটি দিনের জন্যও ইউনিয়ন পরিষদে ইনামুল হাসানের দুর্নীতিকে সহ্য করা হবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।'
গোপালপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি হাসমত আলী কাজল বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে নৌকার পক্ষে কাজ করে ইনামুল হাসানকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলাম। কিন্তু সে চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে নানা অপকর্মের মাধ্যমে নৌকা প্রতীককে অপমান করছে। সে সমাজের গণ্যমান্য মানুষের সম্মানহানি করছে। নৌকার পক্ষের লোকজনদের গালিগালাজ করছে। ওদিকে নৌকা বিরোধীদের সঙ্গে সে আতাত করছে। সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। জনগণের অর্থ লুটপাট করছে। এখন সাধারণ মানুষের কাছে গেলে আমাদের লজ্জা পেতে হয়। আমরা দুর্নীতিবাজ এই চেয়ারম্যানের বিচার দাবি করছি।’
গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান ইকু বলেন, 'ইনামুল হাসানের মতো দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান অতীতে গোপালপুর ইউনিয়নে কেউ ছিল না। গৃহহীন মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সব ঘর দিয়েছেন, চেয়ারম্যান টাকার বিনিময়ে সে সব ঘর সচ্ছল মানুষের নামে বরাদ্দ দিয়েছে। এই ধরনের দুর্নীতি আওয়ামী লীগকে অজনপ্রিয় করার জন্য যথেষ্ট।'
সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন- গোপালপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি খান আমিরুল ইসলাম, জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোনায়েম খান, গোপালপুর তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান নওয়াব আলী, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির শেখ, দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম মোল্যা, এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মহীন মিয়া, চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আলী, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য রাজিউর রহমান রাজিব, গোপালপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম, টগরবন্ধ ইউপি সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজান মিয়া, বাজার বণিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা গাজী ওমর ফারুক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রিপন খান, শাহাজান মোল্যা, নারায়ণ চন্দ্র কুণ্ডু, শ্রীবাস কুণ্ডু, সৈয়দ ওহিদুজ্জামান, মনিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ, মনিরুজ্জামান মনি, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফা মোল্যা, আলী হোসেন, মহসীন মোল্যা প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, চেয়ারম্যান ইনামুল হাসানের বিরুদ্ধে গৃহহীনদের জন্য সরকারের বিনামূল্যে বরাদ্দকৃত ঘর বিতরণে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের অভিযোগ আছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিশু কার্ড বিতরণে আর্থিক লেনদেন এবং বরাদ্দের চাল আত্মসাতের অভিযোগ আছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ঘরে জুয়ার আসর ভাড়া দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো ফরিদপুর জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্ত করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ইনামুল হাসানের বিরুদ্ধে মোটা অংকের যৌতুক চেয়ে না পেয়ে স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ এবং যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্নজনকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন থানায় একাধিক জিডি ও আদালতে মামলা হয়েছে।
এ সব বিষয়ে কথা বলার জন্য ইনামুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এসব নিয়ে কথা বলার সময় নেই।'
ওডি/এমবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড