ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার উজান কাশিয়ার গ্রামের পঁচাত্তর বয়সী বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুন। ছেলে লাল মিয়া (৫০) আর প্রতিবন্ধী নাতনি সুইটি আক্তারকে (১০) নিয়ে উঠেছিলেন ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশায়। উদ্দেশ্য গৌরীপুর উপজেলা সদরে গিয়ে নিজের বয়স্ক ভাতা আর প্রতিবন্ধী নাতনির ভাতার কার্ড করবেন।
পথিমধ্যে তাদের অটোরিকশায় ওঠেন একই গ্রামের সাহেরা খাতুন (৬২) ও জমিলা খাতুন (৬৩) নামে আরও দুই বৃদ্ধা। তাদেরও একই উদ্দেশ্য- ভাতার কার্ড বানাবেন। কিন্তু নিয়তি হয়তো ভিন্ন কিছুই ঠিক করে রেখেছিল তাদের জন্য।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাসচাপায় বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুন পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর রাবেয়া খাতুনের ছেলে লাল মিয়া, প্রতিবেশী সাহেরা খাতুন, ভাংনামারী ইউনিয়নের সুতিরপাড় গ্রামের অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলামেরও (৫৫) মৃত্যু হয়।
এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এখন হতাহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ওই পরিবারগুলোর কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে পুরো উজান কাশিয়ার গ্রামের। সকলের মুখে এক কথা- ‘কী দরকার ছিল ভাতার? মানুষতো চলে গেল।’
ফলে কিছুতেই থামছে না স্বজনদের কান্নার রোল।
এ দিকে, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত প্রতিবন্ধী সুইটি আক্তার (নিহত লাল মিয়ার মেয়ে) ও জমিলা খাতুন (৬৩) বর্তমানে মমেক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শিউলী আক্তার (২৫) ও জুলেখা আক্তার (৪০) নামে আরও দুইজন নারী।
স্থানীয়রা জানান, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের গৌরীপুর উপজেলার চরশ্রীরামপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলে বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুন নিহত হন। পরে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হলে অটোরিকশা চালক রফিকুল, গৌরীপুর উপজেলার উজান কাশিয়ারচরের বাসিন্দা সাহেরা খাতুন ও রাবিয়া খাতুন মারা যান। আর দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন সুইটি আক্তার, শিউলী আক্তার ও জুলেখা আক্তার।
এ দিকে, ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সাব-অফিসার মো. জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন, ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ছয়জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ইটভাটার মাটি নেওয়ার দুইটি হ্যান্ড ট্রলি রাস্তার বাম পাশে প্রতিযোগিতা করে ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিল। এতে কিশোরগঞ্জগামী যাত্রীবাহী বাস ‘এম কে সুপার লামিয়া এন্ড সাদ পরিবহনের’ সঙ্গে ময়মনসিংহগামী ওই অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
পরে খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সাব-অফিসার মো. জয়নাল আবেদিনের নেতৃত্বে হতাহতদের উদ্ধার করা হয়। এ দুর্ঘটনায় রাস্তার দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গৌরীপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেন।
আরও পড়ুন : গৌরীপুরে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৪
এ ব্যাপারে গৌরীপুর থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘নিহত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি আটক করে থানায় রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড